পুলিশের ভুলে বিনা অপরাধে এক মাস কারাগারে
ঢাকার যৌতুকের একটি মামলায় গত ৭ আগস্ট মো. জামসু মিয়া (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানা পুলিশ। এরপর তাঁকে কিশোরগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারের পর মো. জামসু মিয়ার স্ত্রী, ছেলে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের চক্ষু চড়কগাছ!
স্ত্রী তো তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেননি, তাহলে কেন কারাগারে যেতে হলো? স্বামী আবার বিয়ে করলেন কবে? এ নিয়ে বিভ্রাটে পড়ে যায় জামসুর পরিবার। কিন্তু সত্য ঘটনা হচ্ছে নামের মিল থাকায় নির্দোষ জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইটনা থানা পুলিশ। এ যেন দ্বিতীয় জাহালম! অবশেষে ৩৩ দিন কারাগারে থাকার পরে আজ তাঁর মুক্তির আদেশ মিলেছে।
আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিল্লাত হোসেনের আদালতে এ ঘটনা ঘটছে। মো. জামসু মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার উদিয়ারপাড় (স্কুলপাড়া) গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে। আর আসল আসামির নাম জামসু মিয়া (সাগর)। তিনি একই উপজেলার ইটনা নয়াহাটি গ্রামের সিরাজ মিয়া ওরফে ডেঙ্গু মিয়ার ছেলে।
আজ জামসু মিয়ার আইনজীবী তানজির সিদ্দিকী রিয়াদ শুনানি করে বলেন, মাননীয় আদালত, এ জামসু মিয়া প্রকৃত আসামি না। আজ আদালতে মামলার বাদী আছেন। বাদীর স্বামীর নাম মো. জামসু মিয়া সাগর। এখানে পুলিশ ভুল করে আসামি জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নির্দোষ, তাঁর মুক্তি চাচ্ছি।
আইনজীবী তানজির শুনানিতে বলেন, আসামি জামসু মিয়া ৩৩ দিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
এরপর মামলার বাদী মানহুরা খাতুন আদালতকে বলেন, এ আসামি আমার স্বামী না। ভুল আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর স্বামী জামসু মিয়া সাগরের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় মামলা করেন। এরপর মামলায় একবার জামিন নিয়ে ২০১৬ সালে মরিশাস পালিয়ে যান। তিনি এখনো সেখানেই আছেন।
শুনানি শেষে বিচারক ভুল আসামি জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তারের জন্য কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, এই মর্মে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোর্শেদ জামান, পরোয়ানা তামিলকারী উপপরিদর্শক (এসআই) শামছুল হাবীব ও ফারুক আহমেদ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল হালিম, উজ্জ্বল ও আজিজুলসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন এবং জামসু মিয়াকে মুক্তির নির্দেশ দেন।
নথি থেকে জানা যায়, জামসু মিয়াকে গ্রেপ্তার করার পরে তাঁর আইনজীবী তানজির রিয়াদ বিচারক মিল্লাত হোসেনের কাছে আসামিকে মুক্তির আবেদন জানান। শুনানিতে আইনজীবী বিচারককে বলেন, এ আসামি ভুল আসামি।
এরপর বিচারক ইটনা থানার ওসিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশের পর ইটনা থানার ওসি মোহাম্মাদ মোর্শেদ জামান আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ওসি প্রতিবেদনে বলেন, মূল আসামি জামসু মিয়া ওরফে সাগরের বিরুদ্ধে আদালতের সাজা পরোয়ানা পাওয়ার পর তা তামিলের জন্য এসআই শামছুল হাবীবের নামে হাওলা করা হয়। গত ৮ আগস্ট এসআই ফারুক আহমেদ, এএসআই আবদুল হালিম, উজ্জ্বল ও আজিজুল সোর্সের দেওয়া তথ্য মতে আসামিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন।
প্রতিবেদনে ওসি বলেন, এরপর জানতে পারি গ্রেপ্তারকৃত জামসু মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে কোনো মামলা নেই। ভুলক্রমে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওসি।
আজ মুক্তির আদেশের পর জামসু মিয়ার ছেলে মো. তুষার মিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ৭ আগস্ট রাতে পুলিশ ঘরে ঢুকে আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পরের দিন এক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে আমরা থানায় যাই। সেখানে জামসু মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকায় কোনো মামলা নেই বললেও তারা কোনো যাচাই-বাছাই না করেই আদালতে যেতে বলে।’
আইনজীবী তানজির রিয়াদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, নির্দোষ জামসু মিয়ার মুক্তিনামা কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি মুক্তি পাবেন।