নেত্রকোনায় অটোরিকশাচালক হত্যায় তিনজন গ্রেপ্তার
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে অটোরিকশাচালককে হত্যা করে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনার সাতদিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর মধ্যে সেকুল নামের একজনকে দুর্গাপুরের লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে আটকের পর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা থেকে সবুজ মিয়াকে ও শেরপুরের সদর উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের গণই মমিনাকান্দা থেকে মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিন আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, দুর্গাপুর উপজেলার পশ্চিম বিলাশপুর গ্রামের সদর আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৭) গত ২ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মতো ব্যাটারিচালিত অটো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। যথাসময়ে বাড়িতে ফিরে না এলে তাঁর স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন তাঁকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে পরদিন দুর্গাপুর থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
পরে ৫ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরের মিনকি ফান্দা সাকিনের মরাখলা পাহাড়ের পাশে স্থানীয়রা বান্দরের টিলা পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ ফুট ওপরে দুর্গম জঙ্গলে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। দুর্গাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাত-পা ও মুখমণ্ডল পরনের শার্ট ও প্যান্ট দিয়ে বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। মৃত ব্যক্তির পরনের প্যান্ট ও শার্ট দেখে স্বজনরা লাশ শনাক্ত করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্তে জানা যায়, গাজীপুর থেকে শাহীন ওরফে মোল্লা, মানিক মিয়া ও তাদের অন্যতম সহযোগী দুর্গাপুরের বাসিন্দা সেকুল ইসলামের সহযোগিতায় অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ১ সেপ্টেম্বর শাহীন ওরফে মোল্লা ও মানিক গাজীপুর থেকে দুর্গাপুর আসেন। পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম সাইদুলকে সাদাসিধা দেখে তারা তিনজন তাঁর অটো ভাড়া করে ঘুরে বেড়ান এবং মোবাইল নম্বর রেখে দেন। রাতে তাঁরা বিরিশিরি স্বর্ণা গেস্টহাউজে রাত কাটায়। ২ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাইদুলকে তারা ডেকে নিয়ে এসে পুনরায় অটোযোগে ঘুরতে থাকেন। ভিকটিম সাইদুলকে তারা মদ পান করিয়ে বান্দর টিলা পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। হত্যার পরিকল্পনা মোতাবেক আগেই দুর্গাপুর বাজার থেকে গামছা কিনে রাখে। সন্ধ্যার দিকে তারা ভিকটিমকে দুর্গম বান্দর টিলা পাহাড়ের আনুমানিক ৪০ ফুট উপরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর অটো নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলার হক্কানি সাউন্ড অ্যান্ড ব্যাটারির মালিক সবুজ মিয়ার কাছে নিয়ে বিক্রি করে দেন। সবুজ মিয়াকে আগেই পুরাতন অটো বিক্রি করবে বলে জানান এবং অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খুলে রাখতে বলেন।
এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী সেকুলকে দুর্গাপুরের লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে আটক করা হয়। এরপর ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা থেকে আসামি সবুজ মিয়ার হেফাজত থেকে চোরাই অটো উদ্ধার করা হয় এবং আসামি সবুজ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের দেওয়া তথ্য মতে, শেরপুরের সদর উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের গণই মমিনাকান্দা থেকে অন্যতম আসামি মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।