‘ফিল্মে সুযোগ পেলে নাচব, অনেকেই তো নাচেন’
বৃষ্টি হলে নাচতে ভালোবাসেন কাজল। কাউকে দেখানোর জন্য নয়, নিজের মনের খোরাক মেটানোর জন্য নাচেন তিনি। আর এই নাচ দিয়ে সম্প্রতি তিনি হলেন ভাইরাল।
গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন মোড়। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তায় নেমে নাচতে শুরু করে দেন কাজল ; পুরো নাম মোহাম্মদ আজম খান। পাশেই ছিল নটর ডেম কলেজের ছাত্রদের বহনকারী বিআরটিসির একটি বাস। বৃষ্টিতে ব্যাপক নাচানাচি করেন কাজল। ওই দৃশ্য ভিডিও করে কয়েকজন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই নাচের দৃশ্য এখন ভাইরাল।
সেটা পুরোনো খবর। নতুন খবর হলো, কাজল এখন এতটাই পরিচিত হয়েছেন যে লোকজনও তাঁর সম্পর্কে জানার জন্য উদগ্রীব। সেই কাজলের সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।
কাজল বলেন, ‘আসলে এত সাড়া পাব, মানুষের এত ভালোবাসা পাব, চিন্তাও করিনি। নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে, এ এক অন্যরকম অনুভূতি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট কাজল। শৈশব থেকেই নাচ, গান করে নিজের মনকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি অন্যকেও আনন্দ উপহার দেন তিনি।
কাজলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। তবে তাঁর বেড়ে উঠা ঢাকার ডেমরা ও পল্টন এলাকায়। দীর্ঘ ২৮ বছরের বেশি সময় ধরে একটি পরিবারের সঙ্গে পুরানা পল্টন লাইনে তিনি থাকেন। যদিও ওই পরিবারের সঙ্গে কাজলের কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু এত দিনে সেটি রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বড় সম্পর্কে পরিণত হয়েছে বলে জানান কাজল।
নাচ প্রসঙ্গে কাজল বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই এভাবে নেচে গেয়ে আনন্দ পাই। আমার এমন নাচ, গানে সাধারণ মানুষও আনন্দ পান। তাঁরাও আমাকে ভালোবাসেন। তবে এর ভেতর কষ্টও আছে। অনেকে আমাকে পাগল ভাবেন। কেউ কেউ মনে করেন আমি পাগল। মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই এমন আচরণ করি। মূলত তেমন কিছুই না। আমি মনের আনন্দে এসব করি। ছোটবেলায় যখনই টিভিতে হিন্দি গান হতো তখনই আমি নাচতাম, কোথাও গান হলে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারি না।’
নাচের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘আমাকে আসলে কেউ এসব শেখায়নি। আমি নিজে থেকেই এসব আয়ত্ত করেছি।’
সুযোগ পেলে চলচ্চিত্রে নাচতে আগ্রহী কাজল। কথায় কথায় তিনি বলেন, ‘ফিল্মে সুযোগ পেলে নাচব। অনেকেই তো নাচেন।’
হঠাৎ রাস্তায় নাচার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘আসলে এটা প্ল্যান প্রোগ্রাম করে নাচ নয়। অনেক দিন পর বৃষ্টি হলো, তাই মনে হলো একটু বৃষ্টিতে ভিজি আর নাচ করি, তাহলে মানুষ আনন্দ পাবে। ওই দিন আমি নয়াপল্টন, কাকরাইল বেশ কয়েক জায়গাতে নাচ করেছি। কিন্তু এটা এভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে সেটা ভাবতে পারিনি।’
কাজল আরো বলেন, ‘আমি সবসময় বৃষ্টি নামলেই ভিজি। নাচানাচি করি, আনন্দ পাই। কিন্তু এবার এমন হবে ভাবিনি। যে ভাই আমার নাচ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছেন আমি তাঁকে অন্তর থেকে দোয়া করি, ধন্যবাদ জানাই। তাঁর কারণে আজ আমি সবার কাছে আরো বেশি পরিচিত হয়েছি।’
নাচ নিয়ে ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে কিছু করার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘কেউ যদি প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আমাকে ডাকে আমি যাব। আমার ইচ্ছে আছে নিজেকে মেলে ধরার কিন্তু কখনো সেই সুযোগ হয়নি। আমার তো আসলে অর্থ নেই সব কিছু প্রচার করার। তাই ইচ্ছে থাকলেও কখনো হয়ে উঠেনি। এখন যদি কেউ মনে করেন আমাকে দিয়ে হবে, আমাকে ডাকেন, আমি সবসময় প্রস্তুত।’
কাজল আরো বলেন, ‘আমাকে সবসময় এলাকার লোকজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকেন, বিয়ে, হলুদ বা যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে। আমি যাই নেচে গেয়ে আনন্দ দেই, সবাই খুশি হয়। বন্ধুরাও আমাকে তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে ডাকে। প্রাতিষ্ঠানিক কোথাও নাচে অংশ না নিলেও শিল্পকলা, বেইলি রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় নাচ করেছি। এসব জায়গায় অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসা দিয়েছে। সুযোগ পেলে কে না নিজেকে প্রমাণ করতে চায়? আমি সুযোগ পাইনি। এজন্য আমি পারলেও হয়তো সেটা কারো কাছে তেমন কিছু মনে হয়নি।’
নিজের কোনো কষ্ট থেকে নেচে গেয়ে দুঃখ ভুলে থাকার চেষ্টা করেন কি না জানতে চাইলে কাজল বলেন, ‘আসলে তেমন কিছু না। তবে আমার এমন নাচ-গান সবাই ভালো ভাবে নেয় না। অনেকে মনে করেন আমি পাগল সেই জন্য এমন করি। আসলে তারা জানেন না এটাতে আমি আনন্দ পাই বলেই করি। আমি পাগল বা মানসিক ভাবে অসুস্থ নই। তাদের বোঝার ভুল।’
নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে কাজল বলেন, ‘আমার বাবা নেই। তিনি মারা গেছেন ২০০৮ সালে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চার জন গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে থাকেন। তারা এলাকায় কাজ করেন। তাঁদের মূল পেশা কৃষি। আমার মাও থাকেন গ্রামের বাড়িতে। আমিও সেখানে যাই মাঝেমধ্যে। মাও আমার কাছে আসেন। আমি বেশি পড়াশোনা করতে পারিনি। নটর ডেমের নাইট স্কুলে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। ইংরেজি ভালো না পারায় আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারিনি।’
বর্তমানে কাজল একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি একটা ছোট ফাস্টফুডের দোকান ও আরেকটা হোম সার্ভিস লন্ড্রি নিজের রয়েছে বলে জানান কাজল। তিনি বলেন, ‘এগুলো থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে নিজে চলি, পরিবারকেও সহায়তা করি।’