পাবনায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে : জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি
পাবনায় ধর্ষণের শিকার নারীর সঙ্গে থানায় ধর্ষকের বিয়ের ঘটনায় পাবনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘পাবনা সদর থানায় ধর্ষণ ও বিয়ে সংক্রান্ত যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার প্রতি আগেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছিল। আজ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক একটি প্রতিবেদন দাখিল করা জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজকে প্রধান করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ডেপুটি সিভিল সার্জনকে সদস্য করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। কমিটিকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।’
এর আগে পাবনা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
ওসি প্রত্যাহার, এসআই বরখাস্ত, গ্রেপ্তার আরো ২
‘গণধর্ষণের শিকার’ গৃহবধূকে থানার ভেতরে ‘ধর্ষকের’ সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হককে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত হোসেন আলী ও সঞ্জু নামের আরো দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে মামলার মোট চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ রফিকুল ইসলাম নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার মানববন্ধন
এদিকে, পাবনার ঘটনাসহ সারা দেশে ধর্ষণ, হত্যা, নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ বেলা ১১টায় মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখা। এতে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। তারা অবিলম্বে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।
এর আগে গতকাল বুধবার এ সংগঠনের পক্ষ থেকে দায়ীদের বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
গণধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগ, প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ গত ২৯ আগস্ট রাতে এক সহযোগীসহ তাঁকে তাঁর বাড়িতে ধর্ষণ করেন। দুদিন পর দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘণ্টু একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। সেখানে ঘণ্টুসহ চার থেকে পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদীর উপজেলার মুলাডুলি এলাকা থেকে ঘণ্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে এসে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তাঁরা ৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ধর্ষক রাসেলকে আটক করে। তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত না করে পুলিশ তাঁকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাঁকে আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে অভিযুক্ত রাসেলকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন ওসি ওবাইদুল।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর মামলা না নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণ মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এ মামলায় আসামি রাসেল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ঘণ্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার পাঁচ আসামির চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে রাসেল ও হোসেন আলী ১৬৪ ধারায় ধর্ষণের স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।