পাবনায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে : ঘটনাস্থলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত দল
পাবনায় গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর এক ধর্ষকের সঙ্গে থানায় বিয়ের ঘটনা তদন্তে নেমেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্ত দল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্যাতিতা, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললেও তদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাঁরা মুখ খোলেননি।
এ ঘটনায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল হক প্রত্যাহার হলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্যতার একাধিক ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় গোটা জেলায় নিন্দার ঝড় বইছে।
তদন্ত দল প্রথমে পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নে নির্যাতিতা গৃহবধূর বাবার বাড়ি থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। টানা তিনঘণ্টা ভুক্তভোগী নারী তাঁর পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাঁরা সদর থানায় যান। আগামীকাল রোববার তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিন সদস্যের তদন্ত দলে রয়েছেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জাহেদ নেওয়াজ, পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান ও পাবনা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কেএম আবু জাফর।
পাবনায় ধর্ষকের সঙ্গে গৃহবধূকে থানায় বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে গঠিত তদন্তদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন। ছবি : এনটিভি
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ধরে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য শুনেছি। সদর থানা ও অপরাধস্থল পরিদর্শন করে তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করেছি।’ তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে জানালেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তদন্ত কমিটির সদস্য পাবনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান বলেন, ‘গণধর্ষণের ঘটনার মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতা নারীর ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে আমরাও ঘটনা তদন্ত করছি। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে। জেলা প্রশাসক পরে প্রতিবেদনটি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠাবেন।’
ইবনে মিজান আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় বিয়ের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে প্রত্যাহার ও উপপরিদর্শক ইকারামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলমান রয়েছে।’
এদিকে, গণধর্ষণের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় দলীয় তদন্ত শেষে অন্যতম অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম ঘন্টুকে দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন বলেন, ‘কারো ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেবে না। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের নমনীয়তা বা সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই।’
গণধর্ষণের শিকার নারীর অভিযোগ, রাসেল আহমেদ গত ২৯ আগস্ট রাতে এক সহযোগীসহ তাঁকে ধর্ষণ করেন। দুদিন পর দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘণ্টু একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে ওই নারীকে ধর্ষণ করে। সেখানে ঘণ্টুসহ চার থেকে পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করে। গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদীর উপজেলার মুলাডুলি এলাকা থেকে ঘণ্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গৃহবধূ কৌশলে পালিয়ে এসে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তাঁরা ৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ধর্ষক রাসেলকে আটক করে। তবে বিষয়টি মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত না করে পুলিশ তাঁকে থানায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাঁকে আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে অভিযুক্ত রাসেলকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন ওসি ওবাইদুল।
গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল বলেন, ‘গৃহবধূকে গণধর্ষণের পর মামলা না নিয়ে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে থানায় ধর্ষণ মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে এ মামলায় আসামি রাসেল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল ইসলাম ঘণ্টুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার পাঁচ আসামির চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে রাসেল ও হোসেন আলী ১৬৪ ধারায় ধর্ষণের স্বীকোরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’