মিনিস্টার কারখানায় আগুন, ‘শত কোটি টাকার ক্ষতি’
গাজীপুরে মাইওয়ান গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার ইলেকট্রনিক্স কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শত কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান কারখানার চেয়ারম্যান এমএ রাজ্জাক খান রাজ।
আজ শনিবার কারখানার সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাজ্জাক খান রাজ জানান, দেশের মানুষকে স্বল্পমূল্যে দেশীয় পণ্য দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০৯ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় মাইওয়ান ইলেকট্রনিক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক লিমিটেড স্থাপন করা হয়। সাদাকালো টেলিভিশন তৈরির মধ্য দিয়ে এ কারখানার যাত্রা শুরু হয়। এখানে দুই হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করে। কারখানায় পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা ছিল। ফায়ারের লাইসেন্স, পরিবেশের সার্টিফিকেট, পৌরসভা লাইসেন্স ও বিল্ডিং কোড সব ঠিক আছে।
কারখানার চেয়ারম্যান জানান, গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে এ কারখানার ছয়তলা ভবনের ষষ্ঠ তলায় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এদিন কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নিজেদের জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে আগুন নেভানো চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পরে তা প্লাস্টিক জাতীয় মালামালের কারণে ষষ্ঠতলার পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। প্রায় ছয়ঘণ্টা চেষ্টার পর তারা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
আগুনে কারখানার ওই ফ্লোরে ও ছাদে মজুদ করে রাখা বিপুল পরিমাণ এলইডি টেলিভিশন ও হোম অ্যামপ্লায়েন্সসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। আগুনে ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গাজীপুরে মিনিস্টার ইলেকট্রনিক্স কারখানার পুড়ে যাওয়া মালামাল। ছবি : এনটিভি
চেয়ারম্যান আরো জানান, ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে কারখানার পক্ষ থেকে একটি নিজস্ব তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের পর অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে কাজ করতে করতে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। যদি কোনো ভুল থেকেও থাকে সেটা যেন আর আগামীতে না ঘটে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব।
সংবাদ সম্মেলনে রাজ্জাক খান কারখানার এ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করে জানান, সবার সহযোগিতা পেলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হব। কারখানাটির জন্য ১২৩ কোটি বীমা করা আছে। তিনি এ ব্যাপারে বীমা কোম্পানিরও সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে তিনদিনের জন্য কারখানাটি সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি জানান, আগুন লাগার পর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় নেতারা সবাই তাঁকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য তিনি সবার কাছে কৃতজ্ঞ ও তাঁদের ধন্যবাদ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কারখানার পরিচালক (অপারেশন) গোলাম মোস্তফা খান, পরিচালক (অর্থ) মো. মুজিবুর রহমান, ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম স্বপন, মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড মিডিয়া কেএমজি কিবরিয়াসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ট্রিপল নাইন (৯৯৯) থেকে শুক্রবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে আমরা ওই কারখানায় আগুন লাগার খবর পাই। সংবাদ পেয়েই ১০ মিনিটের মধ্যে ফায়ারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ওই কারখানায় গুটিকয়েক ফায়ার এক্সটিংগুইশার ছাড়া আগুন নেভানোর জন্য তাদের নিজস্ব পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। গত জুন মাসে তাদের এ ব্যবস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ রকম ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত থাকায় তাঁরা ফায়ার সনদ হালনাগাদ করেনি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’
টঙ্গী কলকারাখানা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক মোতালিব মিয়া জানান, এই কারখানায় নিয়মিত অগ্নিনির্বাপন মহড়ার আয়োজন করা হতো না। ছয়তলার উপরে গুদাম রাখারও নিয়ম নেই। এছাড়া কারখানা ভবনের ছয়তলার ছাদে সপ্তম তলায় একটি অননুমোদিত টিনসেড কক্ষ রয়েছে। কারখানায় ফায়ার অ্যালার্ম ও অগ্নিনির্বাপনের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ছিল না। এ ব্যাপারে প্রায় তিন সপ্তাহ আগেও আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। এ কারণে কলকারখানা অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পরদিন শনিবার কারখানার ছয়তলায় পোড়া মালামাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ভবনের ওই তলার মেশিনারিজসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার বীমা কোম্পানির একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।