শোভন-রাব্বানী পদ হারানোর পর জবিতে মিছিল, মিষ্টি
সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ হারানোর পর ‘খুশিতে’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের একটি অংশ নিয়ম ভেঙে গভীর রাতে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। এ সময় শোভন-রাব্বানীর হাতে সদ্যবিলুপ্ত হওয়া জবির নেতারা সংগঠনের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে স্লোগানে স্লোগানে শুভেচ্ছা জানান।
গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বেরিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
সংগঠনকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ মাথায় থাকা শোভন ও রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এর মধ্যে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন গোলাম রাব্বানী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের সরে যেতেই হয়।
তারপর রাত ১১টায় জবি ক্যাম্পাসে মিছিল করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন জবি শাখা ছাত্রলীগের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
যদিও গত ১১ সেপ্টেম্বর জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাত সাড়ে ১০টার পর ক্যাম্পাসে সব ধরনের অবস্থান নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের তরিকুল-রাসেল অনুসারীদের শোডাউন ও মিছিলে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়ায়। অনেক শিক্ষার্থী বিধিনিষেধের মধ্যে মিছিলের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
যদিও এ ব্যাপারে শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্ত যাতে বাস্তবায়ন হয়, তাই আমরা মিছিল করেছি।’
সংগঠনের সাবেক নেতা হয়ে মিছিলের যৌক্তিকতা কতটকু জানতে চাইলে রাসেল পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘সাবেক নেতা তাই বলে ক্যাম্পাসে যাওয়া কি নিষেধ?’ প্রক্টর অফিসকে জানিয়ে মিছিল করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ তো কাউকে জানিয়ে মিছিল করবে না।’
রাত সাড়ে ১০টার পর ক্যাম্পাসে মিছিল-সমাবেশের বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করা হলে ছাত্রলীগ নেতা শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল কল কেটে দেন।
আর একই কমিটির সাবেক সভাপতি এবং সদ্য বিবাহিত মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও মিষ্টি খেয়েছি। এটা কি অন্যায়?’
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও মিছিলের বিষয়ে জানতে চাইলে জবি প্রক্টর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা দেখছি বিষয়টা, কারা নিয়ম অমান্য করে ভেতরে ঢুকছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর থেকেই শোভন ও রাব্বানীর ভাগ্য সুতায় ঝুলতে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জবির নেতা রাসেল ‘বেকায়দায় থাকা’ শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝারেন, মনে করিয়ে দেন অতীত দিনের কথা।
এক পোস্টে রাসেল বলেন, ‘জনাব শোভন, রাব্বানী সাহেব..... কেমন আছেন?? মধুচন্দ্রিমা তো শেষ, এখন তো আর পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাবেন না। নিজেদের মহাপ্রতাপশালী ভেবেছিলেন, এখন দেখেন আপনাদের খুঁটির জোর কতটুকু...।’
‘জনাব রাব্বানী সাহেব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি স্থগিত করে আমাকে আর তরিকুলকে ডেকে নিয়ে মাসে কত টাকা করে যেন চেয়েছিলেন কমিটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য?? আর জগন্নাথের নতুন ক্যাম্পাসে বালু ভরাটের কাজের জন্য যে ঠিকাদারটা পাঠিয়েছিলেন তার নাম মনে আছে?? বালু ভরাট ঘনফুট কত টাকা করে যেন বলেছিলেন?? আপনি ভুলে গেলেও আমি ভুলি নাই। সেগুলো প্রমাণসহ দেওয়া হয়েছে। আমাদের কমিটি ভেঙে যে মজাটা নিয়েছিলেন সেই মজাটা এখন আমি পাচ্ছি...,’ রাসেল যোগ করেন নিজের পোস্টে।
‘আর যাই হোক সুষ্ঠু রাজনীতি নেই’
শোভন-রাব্বানীর বিদায়ের পর আনন্দে গভীর রাতে মিছিল করা নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেকই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে এর সমালোচনা করেন।
ইমরান খন্দকার ইমু নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী লিখেছেন, ‘যেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পদ থেকে অব্যাহতি দিলে যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নেতারা আনন্দে মিছিল করে, সেখানে আর যাই হোক সুষ্ঠু রাজনীতি নেই।’
মাহমুল হাসান নামের ছাত্রলীগের আরেক কর্মী বলেন, ‘সাবেক নেতারা ক্যাম্পাসে আসবে দিনে, তাঁরা আসলেন রাতে, তাও আবার প্রশাসনিক নিয়ম ভঙ্গ করে। তাহলে কি আবারও ক্যাম্পাসের পরিবেশ খারাপ হবে?’