পুঠিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ
শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় মামলার এজাহার পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিযোগে রাজশাহীর পুঠিয়া থানার প্রত্যাহার হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিল উদ্দিন আহম্মেদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাজশাহীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এজাহার পরিবর্তন সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তদন্তাধীন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করায় রাজশাহীর পুলিশ সুপারকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে ওই ওসিকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হবে না এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রুলে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, দুদক চেয়ারম্যান, রাজশাহীর পুলিশ সুপার, ডিআইজি রাজশাহী রেঞ্জ এবং ওসি সাকিল আহমেদকে বিবাদী করা হয়েছে।
রাজশাহীতে শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ আলী হত্যা মামলার এজাহার পাল্টে ফেলার ঘটনায় আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
আদালত বলেছেন, একজন ওসির বিরুদ্ধে যদি এত অভিযোগ উঠে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
গত ১১ জুন পুঠিয়ার কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি ইটভাটা থেকে পুঠিয়া উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ১৮ জুন জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘নুরুল ইসলামের সমকামিতার বদ অভ্যাস ছিল। এলাকার এক কিশোরকে তিনি এ কাজে বাধ্য করতেন। ১০ জুন রাতেও নুরুল ইসলাম ওই কিশোরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন। একপর্যায়ে ওই কিশোর তাঁকে ইটের আঘাতে হত্যা করে। তাই ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।’
তবে নিহতের পরিবার বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ তুলে দাবি জানায়, গত ২৪ এপ্রিল উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নুরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে পুঠিয়া থানার ওসি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নুরুলকে পরাজিত করান। ফলে সাধারণ সম্পাদক হন আবদুর রহমান পটল। এ ফলাফলের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলামসহ পরাজিত তিনজন প্রার্থী আটজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত শ্রমিক ইউনিয়নের সব কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নুরুল ইসলাম যে রাতে খুন হন, সেদিনই আদালতের জারিকারক উপজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে গিয়ে আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাঁর সঙ্গে নুরুল ইসলামও ছিলেন। তখন আসামিদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টা থেকে নুরুল ইসলামের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সকালে ইটভাটায় নুরুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনার পর নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানা নির্বাচনী মামলাটির তিনজন আসামিসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় একটি হত্যা মামলার এজাহার দেন। তখন ওসি সেটি সংশোধন করতে বলেন। নিগার সুলতানা ওসির কথামতো সংশোধন করে ওই পাঁচজনকে সরাসরি আসামি না করে ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে তাদের নাম উল্লেখ করেন। এরপর সেটা ওসিকে দিলে তিনি ‘দেখছি’ বলে নিগারকে বাসায় চলে যেতে বলেন। কিন্তু নিগার সুলতানার এজাহার মামলা হিসেবে রেকর্ড করেননি ওসি।
নিহতের শ্যালক মাসুদ রানার দাবি, ওসি সাকিল উদ্দিন আহম্মেদ নিগার সুলতানার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রেখেছিলেন। সেই কাগজেই পরবর্তীতে মামলার এজাহার করা হয়। এতে কারো নাম নেই। সেই মামলাটিই এখন তদন্ত করছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ মামলাটিতেই এক কিশোরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ঘটনাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন।
এদিকে পুঠিয়া থানার ওসি সাকিল উদ্দিন আহম্মেদকে গত শনিবার প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।