শখের রাম্বুটানে সফল উসমান
ভিনদেশি ফল রাম্বুটানের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশীয় মাটি ও আবহাওয়া উপযোগিতায় ঔষধি গুণসমৃদ্ধ ফল রাম্বুটানের ফলনও হচ্ছে ভালো। রপ্তানির সম্ভাবনাময় এই ফলের উৎপাদন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানায় নেত্রকোনা জেলা কৃষি বিভাগ।
থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস ও কম্বোডিয়া অঞ্চলের ফল রাম্বুটান। খোসা ছাড়ালে ফলের ভেতরের খাবার উপযোগী অংশটি দেখতে ও স্বাদে লিচুর মতো। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও মিনারেল ছাড়া অন্য আরো ভিটামিন থাকায় রাম্বুটানের কদর বেশি। চারা রোপণের চার থেকে পাঁচ বছর পর গাছে ফলন আসে। চৈত্র মাসে গাছে ফুল হয়ে শ্রাবণ মাসে ফল পাকতে শুরু করে। একটি গাছে শুরুর দিকে ২০ থেকে ২৫ কেজি ফলন দেয়। পরে তা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ কেজিতে দাঁড়ায়। স্থানীয় বাজারে চারশ টাকা কেজি দরে বিক্রে হচ্ছে এই ফল।
মালয়েশিয়াফেরত নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর উইনিয়নের হরিপুর গ্রামের রাম্বুটানের সফল চাষি মো. উসমান গণি জানান, ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরার সময় শখের বশে পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানোর জন্য দুই কেজি রাম্বুটান নিয়ে আসেন তিনি। বীজ থেকে বাড়ির আঙিনায় দুটি চারা গাছের জন্ম হয়। সঠিক পরিচর্যায় গাছ বড় হওয়ার পর একটি গাছে ১৯৯৮ সালের মার্চ মাসে ফল আসে। বর্তমানে তাঁর বেশ কয়েকটি গাছ রয়েছে।
উসমান গণি আরো জানান, এক একটি বড় গাছ থেকে মৌসুমে ৪০ থেকে ৫০ কেজি রাম্বুটান সংগ্রহ করেন তিনি। প্রতি কেজি ফল স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তিনি এখন রাম্বুটান ছাড়াও ৭০ থেকে ৮০ প্রকার ফল ও ঔষধি গাছ থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টাকা আয় করছেন।
থাইল্যান্ডের এ ফল বাংলাদেশে চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে উসমান গণি দাবি করেন, ‘আমি বাংলাদেশের প্রথম রাম্বুটান চাষি। আমার সাফল্যে অন্যেরা এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে। চারাগাছ তৈরি করে তা বিক্রি করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।’
উসমান গণির রাম্বুটান চাষ এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তাঁকে দেখে ফলটি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেকেই। স্থানীয়রা বলেছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই এসে ফল নিচ্ছেন, চাষ করতে চারাও নিচ্ছেন রাম্বুটানের। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ আর পাকাপোক্ত, অর্থাৎ খাবার উপযোগী হলে গাঢ় লাল রঙের হয় রাম্বুটান। প্রতিটি চারা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ফলটির উৎপাদন বাড়ালে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে জানিয়ে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কলম পদ্ধতিতে এলাকা উপযোগী করে চাষ বাড়াতে মানসম্পন্ন উদ্যান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
ফলন নিয়ে জানতে চাইলে এই কৃষিবিদ বলেন, ‘ফুল থেকে পরিপূর্ণ ফল হতে সময় লাগে ২৮ দিন। খাওয়ার উপযোগী, অর্থাৎ পাকতে ৩২ দিনের মতো লাগে। উর্বর লাল মাটিতে ফলন ভালো পাওয়া যায়।’