চড় মেরে ছাত্রের কানের পর্দা ফাটালেন শিক্ষক!
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ছোট বিশাকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদের থাপ্পরে ইমন হোসেন (১৪) নামের এক ছাত্রের কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইমন ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র এবং বিশাকোল গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে।
গতকাল রোববার বিকেলে এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ছাত্রের বাবা।
আহত শিক্ষার্থী ইমন হোসেন সাংবাদিকদের জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয়ে রুটিন মোতাবেক শিক্ষক না থাকায় প্রধান শিক্ষক আব্দুর মজিদ নিজেই নবম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ক্লাস নেওয়ার জন্য যান। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ওই সময়ে চেঁচামেচি করছিল। ইমন ক্লাসের প্রথম সারিতে বসা ছিল। সে দাঁড়িয়ে সবাইকে চেঁচামেচি থামাতে বলে। এ সময় প্রধান শিক্ষক দেখে দ্রুত তার কাছে এসে মাথার চুল ধরে কানের উপর বেশ কয়েকটি থাপ্পর মারেন। এ ছাড়া পিঠে কিল মেরে বলেন, ‘তুই বড় মাস্তান হইছিস?’ এ সময় তিনি ও শিক্ষার্থীকে আরো কিছু অশালীন কথাও বলেন। এরপর তার ডান কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকলে ইমন নিজেই বাইরে গিয়ে কানের রক্ত ধুয়ে ফেলে এবং মাথায় পানি দেয়।
ওই দিন বিকেলের দিকে তার কানে বেশি ব্যথা শুরু হলে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে প্রাথামিক চিকিৎসা নেয়। কিন্তু তার কানের ব্যথা বাড়তে থাকলে শুক্রবারে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রফিকুল ইসলামকে দেখান। এ সময় ডা. রফিকুল ইসলাম কানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে তার অভিভাবকে জানান। কিন্তু কানের ব্যথা না কমায় শনিবারে ইমনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে ইমনের বাবা আব্দুল মালেক বলেন, ‘একজন শিক্ষক এভাবে আমার ছেলেকে কানে থাপ্পর মেরে ক্ষতি করবে এটা কখনো আমি চিন্তাও করিনি। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিশাকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে বেয়াদবি করায় তাকে একটা থাপ্পর মারা হয়েছে। কিন্তু সে ঘাড় ঘুরানোর কারণে হয়তো তার কানে লেগেছে। তবে আমি তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছি এবং বর্তমানে চিকিৎসার খোঁজ-খবর রাখছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, ‘ছাত্রকে কানে থাপ্পর মারার অভিযোগ পেয়ে ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। প্রথমেই শিক্ষার্থীকে যাথাযাথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে প্রধান শিক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে ইউএনও সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি এখনো আমার হাতে আসেনি। তবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি আমি জেনেছি। আহত শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত বা আঘাত করা যাবে না। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’