সম্রাট নির্দোষ, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে : সম্রাটের বোন
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন তাঁর বোন ফারহানা চৌধুরী। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের কাছে সম্রাটের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।
গতকাল রোববার রাতে ফেনীর পরশুরাম উপজেলার পূর্ব সাহেবনগরের বাড়িতে বার্তা সংস্থা ইউএনবির সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি জানান ফারহানা।
ফারহানা চৌধুরী জানান, সম্রাট অসুস্থ ও হার্টের রোগী। তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। সম্রাটের মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
‘জুয়া খেলা সম্রাটের নেশা’—গণমাধ্যমে দেওয়া সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরীর বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবি করেন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘শারমিন চৌধুরী একজন লোভী নারী। সে সব সময় টাকার জন্য আমার ভাইকে যন্ত্রণা দিত। এ জন্য সম্রাট তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল।’
সম্রাটের বোন আরো বলেন, ‘আমার ভাই নির্দোষ, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।’
এদিকে, গতকাল বিকেলে সম্রাটকে নিয়ে পরশুরামে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালানো হয় বলে গুঞ্জন ওঠে। বিকেলে উপজেলার সাহেবনগরের বাড়ির সামনে পুলিশের একটি গাড়ি কিছুক্ষণ অবস্থান নিলেও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযানের খবর পাওয়া যায়নি।
সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমানকে হেলিকপ্টারে করে ফেনীতে নিয়ে যায় র্যাব। তাঁকে নিয়ে রাতে বিশেষ অভিযানের কথা শোনা গেলেও র্যাবের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
ফেনী র্যাব-৭-এর সহকারী পুলিশ সুপার জুনায়েদ জাহেদী বলেন, ‘পুরো বিষয়টি ঢাকা থেকে মনিটর করা হচ্ছে। তাই আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
এর আগে গতকাল রাজধানীর কাকরাইলের ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজ কার্যালয়ে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
অভিযান শেষে সারওয়ার আলম বলেন, ‘সম্রাটের কার্যালয়ে দুটি ক্যাঙারুর চামড়া পাওয়া গেছে। তাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে তাঁকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হবে।’
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সরকার সম্রাটের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সরকারের চলমান অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে সম্রাটের নাম আলোচনায় আসে। রোববার ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকারা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে পরিবহন ব্যবসায়ী মুনির চৌধুরীর বাড়ি থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকে আটক করার কথা জানায় র্যাব।
এরপর গতকাল দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত অভিযান চলে।
কার্যালয়ে ঢুকে দেখা যায়, সম্রাটের কার্যালয়ের বেডরুমের তোশকের নিচে ছয়টি গুলিসহ একটি পিস্তল পড়ে আছে। কার্যালয় থেকে এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা জব্দ করেছে র্যাব। এ ছাড়া র্যাবের অভিযানে দুটি ইলেকট্রিক শক দেওয়ার যন্ত্র, ১৬ বোতল মদ, পাঁচ বান্ডেল তাস ও পাঁচটি কার্তুজ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সেখানে দুটি ক্যাঙারুর চামড়াও পাওয়া গেছে। এই চামড়া অবৈধভাবে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
পরে সম্রাটকে কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় যুবলীগের অন্তত ৩০০ নেতাকর্মী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। সে সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কিও হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় র্যাব-পুলিশ। সে সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। পরে এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ।