পুলিশের হাতে আটক জেমিই আবরারকে ডেকে নিয়ে যান!
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই পর্যন্ত নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে একজন বুয়েটের ১৬তম ব্যাচের মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুনতাসির আল জেমি। এই জেমিই আবরার ফাহাদকে গতকাল রোববার রাতে ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে দ্বিতীয় তলার ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। এ ছাড়া সে সময় জেমির সঙ্গে আরো একজন ছিলেন।
আজ সোমবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরে বাংলা হলের একাধিক শিক্ষার্থী।
একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সৈকত আর হলের এক বড় ভাই সে সময় ১০১১ নম্বর কক্ষে ছিলেন। জেমি আর তার এক বন্ধু আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে যান ২০১১ নম্বর রুমে। এখন পর্যন্ত যাদেরকে আটক করা হয়েছে এরা প্রায় সবাই ওই কক্ষে ছিলেন।’
পরে সৈকতের সঙ্গে কথা বলে এনটিভি অনলাইন। তখন সৈকত বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত ঘটে ঠিক রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর পরই। তবে নির্দিষ্ট সময়টা আমার মনে নেই। তখন আবরার ফাহাদ ঘুমাচ্ছিলেন। জেমি এসে আমাকে আবরারকে ডেকে দিতে বলেন। জেমি বলেন, ভাইয়েরা ডাকছে তাঁকে।’
সৈকত আরো বলেন, ‘এরপর আবরারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে দিলে তাকে নিয়ে যান জেমিসহ আরো একজন। কিন্তু ওই একজনের নাম আমি বলব না। তাঁকেও আটক করবে পুলিশ। আটক করলে আপনারা সব জানতে পারবেন।’
সৈকত বলেন, “সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ফাহাদ। ঘুমানোর আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাকে রাত ৯টার দিকে ডেকে দিবি।’ এটাই ছিল তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথা।”
২০১১ নম্বর পাশের কক্ষের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাত ৮টার একটু পরে ২০১১ নম্বর রুম থেকে ধুপধাপ মারধরের শব্দ পাওয়া যায়। তবে আমরা বুঝতে পারিনি একজনকে মেরেই ফেলা হবে। এই রুমে মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীদের ডেকে আনা হয়। এনে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে শুনলাম ফাহাদকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
পাশের রুমের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই হলে এভাবেই নির্যাতন চালানো হয় সব সময়। এসব ব্যাপার জেনেও হল প্রশাসন কিছুই বলে না। তারই ফল আজ দেখা গেল।’
এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় নয়জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এ ছাড়া ১৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আজ সোমবার বিকেলে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
আটক ব্যক্তিরা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেল, যুগ্ম সম্পাদক মুহতাসিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, সমাজসেবা উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং কর্মী তানভিরুল আবেদিন ইথান ও মুনতাসির আল জেমি।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, আমরা ঘটনার সব সিসিটিভি ফুটেজ হাতে পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। এই হত্যায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে কোন দলের—এসব বিবেচনায় আসবে না।