দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় আবরার ফাহাদকে হত্যা : মির্জা ফখরুল
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী সরকারের দেশবিরোধী চুক্তির প্রতিবাদ করায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আজ নৃশংস ও পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করেছে।
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের মহাভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসনের মাত্রা যেন লাগামহীন হয়ে গেছে। স্বৈরাচারী সরকার দেশের প্রতিবাদী মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত করে দেশকে ভীতির কালো মেঘে ঢেকে দিয়েছে, যাতে সরকারের অপকর্ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ লিখতে, বলতে কিংবা টু শব্দটি উচ্চারণ করতেও সাহস না পায়। বিশ্বের গণধিকৃত সব স্বৈরাচারকে টেক্কা দিয়ে জনসমর্থনহীন আওয়ামী সরকার এখন মানুষের জানমালের নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। দেশে এখন জঙ্গলের শাসন চলছে বলেই একজন মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে গৃহে ফেরার নিরাপত্তাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে এটি মনে হচ্ছে যে, আমরা যেন এক মৃত্যু উপত্যকায় বসবাস করছি। ৩০ ডিসেম্বর মহাসমারোহে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতির পর সরকারের আশকারায় দুষ্কৃতিকারীরা দেশব্যাপী লাগামহীন খুন জখমের খেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের হিংস্ররূপ দেশের মানুষকে বোবা করে ফেলেছে। অজানা আশঙ্কা, আতঙ্ক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।’
‘আজ দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা আবারও প্রমাণ করল-বর্তমান স্বৈরশাহী দেশের মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠকে নির্মূল করে নিজেদের হিটলারি শাসন বজায় রাখতে চায়। তবে জনগণ তাদের এই মনোবাঞ্ছা কোনোদিনই পূরণ হতে দেবে না। মত প্রকাশ ও স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে অতীতের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারায় বাংলাদেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবৃতিতে বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। একই সঙ্গে তাঁকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। দোয়া করি-মহান রাব্বুল আলামিন যেন মরহুম আবরার ফাহাদকে বেহেস্ত নসিব এবং শোকবিহ্বল পরিবারের সদস্যদের এই গভীর শোক সহ্য করার ক্ষমতা দান করেন।’
গতকাল রোববার রাতে বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে এনে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। এ ঘটনায় আজ সোমবার বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ। মামলার প্রধান আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও দ্বিতীয় আসামি যুগ্ম সম্পাদক মুহতাসিম ফুয়াদ।
বরকত উল্লাহ জানান, ছেলে হত্যা ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে এই ১৯ জনের নামে মামলা করা হয়েছে।
বরকত উল্লাহ আরো জানান, মামলার কার্যক্রম শেষ হলে আবরার ফাহাদের মরদেহ বুয়েটে নেওয়া হবে। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় নেওয়া হবে।
এদিকে আবরার হত্যায় এ পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে ১৪ জনকে শনাক্ত করেছে তারা। আটককৃতদের মধ্যে আটজন হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সম্পাদক মুহতাসিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্না, সমাজসেবা উপসম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং কর্মী তানভিরুল আবেদিন ইথান ও মুনাতাসির আল জেমি।