আবরারের হত্যাকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে : আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, আবরার হত্যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা ছাড় পাবে না।
আজ মঙ্গলবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। আসামিদের অনেকেই ধরা পড়েছে। বাকিরাও ধরা পড়বে। এরা কেউ আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে আইনমন্ত্রী বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা তাদের আমলের কথা ভুলে গেছেন। তাদের সময়ে একটি হত্যাকাণ্ডেরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি। আমরা প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেছি।
আনিসুল হক বলেন, দায়িত্ব জ্ঞানহীন নেতারা দেশের সব দুর্ঘটনায় রাজনীতির উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বক্তব্য দেন। এখন ওনারা ( বিএনপি) যে বেসুরা গান গাইছেন এতে জনগণ কান দিবে না।
আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন বরং এ দেশে আইনের শাসন ওনারা নষ্ট করেছেন। সুতরাং ওনাদের (বিএনপি) আগে শুধরাতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইন সচিব গোলাম সারোয়ার, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভূঁইয়া, আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা, কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল কাউছার ভূঁইয়া জীবন প্রমূখ।
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গতকাল রাতেই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১১ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় গতকাল সোমবার ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ আজ দুপুরে ওই ১০ আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড মঞ্জুর করা আসামিরা হলেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
এর আগে আজ মামলাটি চকবাজার থানা থেকে তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো কারা জড়িত তা খুব শিগগিরই খুঁজে বের করা হবে বলেও জানান তিনি।