মানববন্ধনে কাঁদলেন ও কাঁদালেন কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীর হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি পরিণত হয় এক শোক সমাবেশে। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কুষ্টিয়ার শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়াবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কান্নাজড়িত আবেগঘন বক্তব্যে ভারী হয়ে ওঠে প্রেসক্লাব চত্বর। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী প্রকৌশলী মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘আমি যে কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। একই কলেজ থেকে আবরারও পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য বুয়েটে ভর্তি হয়েছেন। হলে থাকার সময় গভীর রাতে আমারও গ্রামে থাকা মায়ের মুখখানি মানসপটে ভেসে উঠত। মনের অজান্তে চোখের কোণ ভিজে যেত। আবরারও হলে থেকে পড়ালেখা করত। ওইদিন রাতে পাষণ্ডরা যখন তাঁকে প্রহার করছিল, তখনো হয়তো আবরারের চোখের সামনে তাঁর জন্মদাতা পিতা-মাতা ও ছোট ভাইয়ের মুখটা বারবার ভেসে উঠছিল। হয়তো একটু পানি চেয়েছিল আবরার। জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিল। তাঁর বুকফাটা আর্তনাদে পাষণ্ড ও নরপিশাচদের মন গলেনি।’
প্রকৌশলী মনজুর তাঁর বক্তব্য শেষ করতে পারেননি। আবরারের মৃত্যু যন্ত্রণার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর আবেগী বক্তব্যে কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে অংশ নেয়। ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে আবরার হত্যার ন্যায়বিচারের দাবি নিয়ে এ কর্মসূচিতে হাজির হয়।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তুহিন আহমেদ বলেন, ‘আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা গোটা বাংলাদেশকেই ক্ষতবিক্ষত করেছে। আবরার কোনো অপরাধ করেনি। সে একজন মেধাবী ছাত্র। একই সঙ্গে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া একমাত্র ছাত্র আবরার। এ সুযোগ আর কেউ পেয়েছিল কি না আমার জানা নেই। এই মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা পাক হানাদার বাহিনীর ভূমিকাই পালন করেছে।’
হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি করে আফরোজা আহমেদ বলেন, ‘নির্মম ও পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা অমিত সাহাকে আড়াল করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ঘটনার জন্য বুয়েটের ভিসি সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।’
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে শিবির সন্দেহে গত রোববার রাতভর নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতারা। পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘ্টনায় ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার ১৯ নেতাকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।