ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে আসামিরা অপকর্ম করেছে
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগের ১০ জনকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন।
এদিকে আজ রিমান্ড আবেদনের পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান (হিরণ) শুনানিতে বলেন, বিজ্ঞ আদালত সহপাঠীরা পরিকল্পিতভাবে আবরারকে নির্মমভাবে আঘাত করে হত্যা করে। এটি একটি আলোচিত ও রোমহর্ষক ঘটনা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ স্তব্ধ। এ আসামিরা এখন আবরারের বাবা-মায়ের কাছে কী জবাব দেবে? বুয়েট একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এখন সেখানে খুনি জন্ম নিয়েছে। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে তারা এ অপকর্ম করছে। সংগঠনের দোষ দেব না। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। পুলিশ যে রিমান্ড আবেদন করেছে তা মঞ্জুর করা হোক।
এর পরে আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের সদস্য ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদের আইনজীবী মোরশেদা খাতুন শিল্পী বলেন, মাননীয় আদালত আমরা সবাই চাই প্রতিটা অপরাধের বিচার হোক। কিন্তু এ আসামি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি পরিস্থিতির শিকার। তদন্ত হোক, তখন বেরিয়ে আসবে দোষী না নির্দোষ। আসামির রিমান্ড বাতিল করা হোক।
এরপর আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্নার আইনজীবীরা দাবি করেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আসামিদের রিমান্ড বাতিল করা হোক।
শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আজ চার আসামির পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন। বাকিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
কী রয়েছে রিমান্ড আবেদনে
গত ৬ অক্টোবর রাত ৮ টা ৫ মিনিটের দিকে আবরার ফাহাদকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পরের দিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর কক্ষে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও লাঠিসোঁটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করা হয়। এর ফলে ঘটনাস্থলে আবরারের মৃত্যু হয়। আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে তাঁর মৃতদেহ ফেলে রাখে। পরে কিছু ছেলে আবরারের মৃতদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও অন্যান্য কারা জড়িত তা উন্মোচন করার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
রিমান্ডে যারা গেলেন
বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, দ্বিতীয় বর্ষ), সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, চতুর্থ বর্ষ), উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল (বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ), সদস্য মুনতাসির আল জেমি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ), মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, তৃতীয় বর্ষ) এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না।
এর আগে আজ মামলাটি চকবাজার থানা থেকে তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো কারা জড়িত তা খুব শিগগিরই খুঁজে বের করা হবে বলেও জানান তিনি।
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় গতকাল সোমবার ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়।
গত রোববার রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। গতকাল রাতেই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১১ জনকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।