বুয়েট যদি মনে করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের প্রতিটি অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে ছাত্ররা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ আছে। এখন বুয়েট যদি মনে করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করবে তাহলে সেটি তারা করতে পারে। তবে আমি ছাত্র রাজনীতি করেই এখানে এসেছি বলেই আগে থেকেই দেশের ভালোগুলো চিন্তা করি।
আজ বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজেই যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করে এসেছি সেখানে ছাত্র রাজনীতি কেন নিষিদ্ধের কথা বলব? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি তাদের বিষয়। স্বাধীনতা ভালো কিন্তু যে এটার মর্যাদা দিতে পারে তার জন্য। বুয়েট যদি মনে করে বন্ধ করে দিতে পারে। এতে আমরা হস্তক্ষেপ করব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছরের একটা ছেলেকে হত্যা করল? এখানে রাজনীতি কোথায়? রাজনীতিতে হত্যা ছিল জিয়াউর রহমানের সময়। এর আগে চুন্নুকে হত্যা করেছিল খালেদা জিয়ার নির্দেশে। এটা তো রাজনৈতিক হত্যা নয়। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলব বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে তল্লাশি চালাতে। খুঁজে দেখতে হবে কারা কারা হলে বসে ১০-২০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। আমি এটার নির্দেশ দিয়ে দেব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে বারবার মিলিটারি শাসন এসেছে। তারাই এসে রাজনৈতিক দলগুলোকে লোভী করে তুলেছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সব সময় আলাদা স্বাধীন সংগঠন ছিল। ছাত্রলীগের পরই আওয়ামী লীগ হয়েছে। রাজনীতি শেষ করেছেন জিয়াউর রহমান। ক্ষমতা গ্রহণের পর আর আইয়ুব খান ক্ষমতা গ্রহণের পর।
সব কিছুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে হবে কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রশ্ন কেন আসে? আমি সরকারপ্রধান। তাই সব কিছুর খোঁজ আমাকে রাখতে হবে। আমি এসব করি। কারণ এটা আমার দায়িত্ব। এর আগে তো একজন সকাল ১১টায় ঘুম থেকে উঠত আর রাত ২টা পর্যন্ত জেগে থাকত। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে দেখেছেন। তাই আপনাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।
আন্দোলনরত ছাত্রদের সেফটি ও সিকিউরিটির বিষয়ে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছে; তারা করতে থাক। যত দিন ইচ্ছে আন্দোলন করুক। কিন্তু তাদের ভেতরে কিছু হলে সেটির দায়িত্ব কে নেবে? যারা নিজেদের সহপাঠীকে এভাবে পিটিয়ে খুন করে তাদের ভেতরে কিছু হলে সেই দায়িত্ব কার?
শেখ হাসিনা বলেন, তারা পুলিশকে আলামত সংগ্রহ করতে বাধা দেয়, ফুটেজ আনতে বাধা দেয়। তাহলে তাদের দায়িত্ব কে নেবে? তাদের সাবেক ছাত্ররাও সমর্থন জানিয়েছে। তারপরও কিসের জন্য আন্দোলন?
প্রদানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই না পুলিশ এখানে হস্তক্ষেপ করুক। কিন্তু তারপরও তাদের যদি সেফটি সিকিউরিটির দরকার পড়ে পুলিশ প্রস্তুত আছে। কিন্তু ভিসি যাওয়ার পর তারা ভিসির সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে তাতে বোঝা যায় না কে ভিসি আর কে ছাত্র।
সদ্য সমাপ্ত নিউইয়র্ক ও নয়াদিল্লি সফর নিয়ে আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন শেষ হয় বিকেল ৫টায়।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ সেপ্টেম্বর আট দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখান থেকে ফিরে তিনি নয়াদিল্লিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে অংশ নিতে ৩ অক্টোবর ভারতে চার দিনের সফরে যান।
শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে ৫ অক্টোবর দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে তিনটি দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং তাদের উপস্থিতিতে সাতটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রিয়াংকা গান্ধীসহ রোববার তাজমহল হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে অবস্থানের সময় আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ঠাকুর শান্তি পুরস্কার ২০১৮’ গ্রহণ করেন। তাঁকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি।
শেখ হাসিনা ২২ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক সফরের সময় ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে বক্তব্য দেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। নিউইয়র্ক সফরকালে তিনি তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ এবং বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য ‘ভ্যাকসিন হিরো’ শীর্ষক দুটি সম্মানজক আন্তর্জাতিক পুরস্কার গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রী আলাদাভাবে আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোউ বেনসোউদা, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস, জাতিসংঘ মহাসচিবের উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বিষয়ক বিশেষ দূত রানি ম্যাক্সিমা ও গ্লোবার হোপ কোয়ালিশনের অনারারি প্রেসিডেন্ট ইরিনা বোকোভার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন।