রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ‘বালিশ কাণ্ড’সহ অন্যান্য দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে।

অনুসন্ধান দলের অপর দুই সদস্য হলেন- দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. আতিকুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এসব তথ্য জানান।

রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মাণাধীন গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাব ও প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা ও ভবনে উত্তোলন কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে গত ১৯ মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

দুর্নীতির নমুনা তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে একটি বালিশের পেছনে ব্যয় দেখানো হয়েছে ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। এর মধ্যে বালিশের দাম পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং সেই বালিশ ফ্ল্যাটে ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা দেখানো হয়েছে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই কমিটির তদন্তেই ৬২ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার টাকার অনিয়মের তথ‌্য উঠে আসে। হাইকোর্টের নির্দেশে গত জুলাই মাসে আদালতে জমা দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির জন্য ৩৪ জন প্রকৌশলীকে দায়ী করা হয়।

গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা ও তা ভবনে তোলায় অনিয়ম নিয়ে গত ১৬ মে একটি দৈনিক পত্রিকা ‘কেনা-তোলায় এত ঝাঁজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ১১টি ২০ তলা ও আটটি ১৬ তলা ভবন হচ্ছে। এরইমধ্যে আটটি ২০ তলা ও একটি ১৬ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ২০ তলা ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। ভবনে বালিশ ওঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা।

প্রতিটি রেফ্রিজারেটর কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৯৪ হাজার ২৫০ টাকা। রেফ্রিজারেটর ভবনে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১২ হাজার ৫২১ টাকা। একেকটি খাট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। খাট ওপরে ওঠানোর খরচ দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৭৭৩ টাকা।

প্রতিটি টেলিভিশন কেনায় খরচ দেখানো হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা। টেলিভিশন ওপরে ওঠাতে খরচ দেখানো হয়েছে সাত হাজার ৬৩৮ টাকা। বিছানার তোষক খরচ পাঁচ হাজার ৯৮৬ টাকা দেখানো হয়েছে, তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৯৩১ টাকা। প্রতিটি ওয়ারড্রোব কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯ হাজার ৮৫৮ টাকা। তা ওপরে ওঠাতে দেখানো হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৯ টাকার খরচ। এভাবে বৈদ্যুতিক চুলা, বৈদ্যুতিক কেটলি, রুম পরিষ্কারের মেশিন, ইলেকট্রিক আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি কেনাকাটা ও ভবনে তুলতে অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা।