‘ভারতীয়রা জলসীমা লঙ্ঘন করে মাছ ধরে, বাংলাদেশের জেলেরা অনাহারে’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারতের জেলেরা জলসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে এসে অবৈধভাবে মৎস্য শিকার করছে। আর বাংলাদেশের জেলেরা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
ভারতের সঙ্গে ‘অবৈধ চুক্তি’ ও বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে এ কথা বলেন রিজভী। মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল মোড় ঘুরে আবারও কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে সাতজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা প্রসঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে রিজভী বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা নিছক একটি হত্যাকাণ্ড নয়। আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা-চেতনায় যে পচন ধরেছে—আবরার হত্যা তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। অবৈধ চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসই ছিল আবরার ফাহাদের অপরাধ। এ জন্যই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে আধিপত্যবাদী অপশক্তি বাংলাদেশের বিরোধী গোষ্ঠীকে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাই আবরারের মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। তাঁর মৃত্যু দেশপ্রেমিক জনগণকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, তা হলো সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান আওয়ামী জুলুমবাজ সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। এই বার্তা থেকেই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ আবরার হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।’
বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘আধিপত্যবাদী অপশক্তি এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণের আন্দোলনের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন শহীদ আবরার ফাহাদ। আবরার ফাহাদ বর্তমান দুরাচার সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরই নয়, শহীদ আবরার এখন দেশপ্রেমের প্রতীক।’
রিজভী আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তির গ্যারান্টি দেন বটে, কিন্তু নিহত ব্যক্তির নামে অপপ্রচারও চালানো হয়। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবিরের কর্মী সন্দেহে হত্যা হিসেবে চালানো হচ্ছে। একইভাবে শহীদ আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠা আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য তাঁর মা-বাবাকে ডেকে নেওয়া হয় গণভবনে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।’
রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানদেরও গণভবনে ডেকে নিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে উদ্ধার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজও ইলিয়াস আলীর পরিবার তাঁর সন্ধান পায়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির মা-বাবাও গণভবনের আশ্বাস পেয়েছিলেন। বিশ্বজিতের মা-বাবা, নুসরাতের মা-বাবা, তনুর বাবাকেও গণভবনে ডেকে নিয়ে বিচারের গ্যারান্টি ও সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব মামলার কী পরিণতি হয়েছে, দেশবাসী তা জানে। এ দেশের জনগণ এই গণভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘সান্ত্বনা ভবন’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। ডাক্তারের ‘সরি’ শব্দটি যেমন রোগীর স্বজনের কাছে চরম ভয়ংকর, গণভবনের ‘সান্ত্বনা’ শব্দটিও স্বজনহারাদের কাছে তেমনই ভয়ংকর! সান্ত্বনার নামে গণভবনের এই প্রহসন যেন দেশবাসীকে আর দেখতে না হয়।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের সর্বস্তরের মানুষের অব্যাহত দাবি সত্ত্বেও শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী। অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়া জরাজীর্ণ কারাকক্ষে রাখা হয়েছে। সরকার তাঁকে কোনোভাবেই মুক্তি না দিয়ে কারাগারে হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নে জোরালো তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্য জনসমাবেশে বুক ফুলিয়ে ঘোষণা করছেন, খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দি রাখা হবে। তাতে প্রমাণিত হয়, দেশে আইন আদালত, বিচার-আচার কিছুই নেই। ক্ষমতাসীন দলের ফ্যাসিস্টরা প্রকাশ্য রাজপথেই রায় ঘোষণা করছেন।’
রিজভী আরো বলেন, ‘চারদিক থেকে পতনের আওয়াজ শুনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে বর্তমান অবৈধ সরকার। দেশনেত্রীকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে একতরফাভাবে নির্বাচন করার পর এখন তাদের ভয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ দিন। অন্যথায় তাঁর সব দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’
রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আবদুর রহিম, যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী, অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, লোকমান হোসেন হাওলাদার, শাহ আলম, জহিরুল ইসলাম বাশার, এম এ হান্নান, কবির উদ্দিন মাস্টার, সাইদুল ইসলাম টুলু, সদস্য শহিদুল ইসলাম পামেল, জাহিদুল আলম মিলন, হিমু, তানভীর আহমেদ, আহমেদ সোহেল মামুন এবং মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের মৎস্যজীবী দলের নেতারা।