চাঁদার ভাগ ২৫ জনকে দিতেন সম্রাট
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরীর লোকজন কয়েকটি ক্যাসিনো, মার্কেট ও ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন। এসব চাঁদার টাকা সম্রাট ও তাঁর লোকজন অন্তত ২৫ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়মিত ভাগ দিতেন।
রাজধানীর রমনা থানার দায়ের হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা সম্রাট এসব কথা জানিয়েছেন র্যাবকে। তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, রাজধানীর মতিঝিল ও ফকিরেরপুল এলাকার ছয়টি ক্যাসিনো ক্লাব থেকে প্রতি মাসে সম্রাটের লোকজন অন্তত ৫০ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন। শুধু তাই নয়, গুলিস্তানের বিভিন্ন মার্কেট, মতিঝিল ও পল্টন এলাকা থেকে সম্রাটের লোকজন নিয়মিত চাদা তুলতেন। এ ছাড়া এসব এলাকার ফুটপাত থেকেও চাঁদা তুলতেন সম্রাটের লোকজন।
সূত্রটি জানায়, এসব চাঁদা নিয়মিত তুলতেন সম্রাটের লোকজন। তাদের কাছ থেকে এসব চাঁদার টাকার হিসাব নিতেন সম্রাটের সহযোগী ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান। আবার এসব চাঁদার টাকার ভাগ যে ২৫ জনকে দিতেন সেগুলোও হিসাব করে দিতেন আরমান। সব শেষে আরমান সম্রাটকে হিসেব বুঝিয়ে দিতেন।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরো জানায়, আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রণাধীন মহাজোটের এক নেতাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম দফায় এক কোটি এবং দ্বিতীয় দফায় ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন বলে সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ওই নেতাকে নিয়মিত চাঁদা দিতেন সম্রাট সেটাও জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন।
সূত্রটি জানায়, সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে যে ২৫ জনের নাম বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তদন্তের জন্য। এখন থেকেই তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদকারী সূত্র জানায়, সম্রাট ভেঙে পড়েছেন অনেকটাই। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র্যাবকে জানিয়েছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে এটা তিনি ভাবেননি। সব সময় যারা তাঁর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন তারাও শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর পাশে থাকেনি বলে জানিয়েছেন সম্রাট।
এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের নাম বলেছেন। তাদের সবাইকে সম্রাট নিয়মিত চাঁদা দিতেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে আমরা নতুন করে নাম পাওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি।’
গত ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে স্টার লাইন পরিবহনের মুনীর হোসেন চৌধুরীর বাসা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করে র্যাব। পরে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁকে নিয়ে অভিযানে বের হয় র্যাব। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে তাঁর কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। সেখানে অবৈধ পিস্তল, গুলি, ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, ১৬ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, নির্যাতন করার জন্য বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। একই সময় সম্রাটের মহাখালী ও শান্তিনগরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব।
পরে কাকরাইলের নিজ কার্যালয়ে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এই আদেশ দেন। পরে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া মাতাল অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ায় এনামুল হক আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই দিন রাতে তাঁকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৫ অক্টোবর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে অস্ত্র ও মাদক মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। একই সঙ্গে তাঁর সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সম্রাট ও আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১৭ অক্টোবর র্যাব-১ কার্যালয়ে নেওয়া হয়।