কোমরে পিস্তল নিয়ে ভোট চাইলেন মেয়র

রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পৌর মেয়র কালাম অভিযোগ স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাঁর জীবন ঝুঁকির মুখে আছে। তাই তিনি নিজের নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্স করা পিস্তল সঙ্গে রাখেন। গত শনিবার এক সভায় কোমরে পিস্তল নিয়ে ভোট চান তিনি।
দলের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রচারকাজে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মেয়র কালাম বলেন, ‘তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে অবস্থান। এই অবস্থান নৌকার বিরুদ্ধে নয়।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার বিকেলে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের তালতলী মোড়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর সরকারের উপস্থিতিতে তাঁর ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী পথসভায় যোগ দেন তাহেরপুর পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। এরপর ইউনিয়নের কনোপাড়া, তেলিপুকুর, পলালী ও গোয়ালকান্দি বাজারে নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় মেয়র কালাম ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে মেয়র আবুল কালাম আজাদ গোয়ালকান্দি বাজারে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর সরকারের আরেকটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় মেয়রের কোমরে পিস্তল ঝুলানো ছিল। এতে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চতুর্থ ধাপে আগামী ৭ মে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেপরোয়া মেয়র আবুল কালাম আজাদ। ২০১১ ও ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। দুই দফা মেয়র হওয়ায় তার অপকর্ম এখন লাগামহীন। তাঁর দৌরাত্ম্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকও অসহায়। সংসদ সদস্য এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু তাঁর কোনো নিদের্শনা মানেন না মেয়র কালাম। চরমপন্থী সর্বহারা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
দলীয় নেতারা আরো জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদক ও ইউনিয়নের সহসভাপতি আব্দুল সালাম। কিন্তু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলমগীর সরকারও নির্বাচন করছেন।
গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবদুস সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়র কালাম প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, আলমগীরের পক্ষে ভোটে না নামলে তাহেরপুর বাজারে কাউকে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেওয়া হবে না। তাঁর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অন্তত ২০০ জন তাহেরপুরে ব্যবসা করেন। কালামের অস্ত্রের ভয়ে অনেকেই এখন দোকানছাড়া।’
এ ব্যাপারে তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে আবদুস সালামকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে। আমার অবস্থান নৌকার বিরুদ্ধে নয়। জেএমবি ও জামায়াত-বিএনপির বিপক্ষে আমি মাঠে নেমেছি। আর যেহেতু আমার স্ত্রীর ওপর এর আগে হামলা হয়েছে, সে কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য আমি লাইসেন্স করা পিস্তল সব সময় সাথে রাখি।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, নেতাকর্মীদের তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। এর বাইরে গেলেই কঠোর ব্যবস্থা। মেয়র কালামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাগমারা উপজেলা কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, তাহেরপুর পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়ায় পৌর কমিটি থানা কমিটির মর্যাদার সমান। কাজেই উপজেলা কমিটি নয়, জেলা কমিটিই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
রাজশাহীর পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘কেউ লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এটি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের মধ্যে পড়ে।’
রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোনোভাবেই লাইসেন্স করা পিস্তল নিয়ে কেউই নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারবেন না। নির্বাচন চলাকালে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স করা সব অস্ত্রই জমা নেওয়ার কথা।’
তবে জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি।’