মুন্সীগঞ্জে ২ ইউনিয়নে ৫ হাজার সমর্থক ঘরছাড়া!

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনকে ঘিরে হুমকি-ধমকির মুখে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়নে প্রার্থীদের প্রায় পাঁচ হাজার সমর্থক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখন অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে রয়েছে।
সদর উপজেলার বাংলাবাজার ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। ওই দুটি ইউনিয়নে আগামী ২৮ মে নির্বাচন হওয়ার কথা।
এর মধ্যে বাংলাবাজার ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রাম থেকেই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী গোলাম মর্তুজার দুই হাজার সমর্থক ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহরাব হোসেন পীরের সমর্থকদের হুমকি-ধমকির ভয়ে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে ভোটগ্রহণের আর মাত্র দুই দিন বাকি থাকলেও এ পর্যন্ত প্রচারে নামতে পারেননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। তিনি নিজেও রয়েছেন ঘরবাড়ি ছাড়া।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাংলাবাজার গ্রামে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মর্তুজা সরকারের ঘরবাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।
প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্ত্রী সোফিয়া বেগম (৬০)। সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ইউনিয়নের কোথাও পোস্টার সাঁটাতে পারিনি। ছেলে মোয়াজ্জেম সরকার বাবু একদিন প্রচারে এসেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন জেলহাজতে রয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর লোকজন এসে পুরো বাড়িঘরে নৌকার পোস্টার লাগিয়ে দিয়ে গেছে। আর শাসিয়ে গেছে-একটি পোস্টার ছিড়লে জানে মেরে ফেলব। অথচ নিজের ঘরে নিজেরই পোস্টার নেই।‘
আশুলিরচর, সরকার কান্দি, শম্ভু হালদার কান্দি, পশ্চিম মহেশপুর, বানিয়াল-মহেশপুর, আশুলিরচর পূর্বকান্দি, বাংলাবাজার প্রভৃতি গ্রামের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর হাজারো নারী-পুরুষ নেই নিজ বাড়িঘরে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সোহরাব হোসেন পীর বলেন, ‘ভরাডুবির ভয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী এলাকায় আসেন না। মূলত এ সবই অপপ্রচার। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নির্বাচন করতে পারলে ভালো লাগত।’
অন্যদিকে, সদরের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর দুই হাজার সমর্থক ঘরবাড়ি ছেড়ে গেছে বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রিপন পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, ‘ইউনিয়নের চরডুমুরিয়া, আমঘাটা, পূর্ব-মাকহাটি, পশ্চিম মাকহাটি, রাজারচর, আনন্দপুর ও মহেশপুর গ্রাম থেকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। নির্বাচন কীভাবে করব? বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকরা বোমাবাজি করে আতঙ্ক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নৌকা প্রতীকের দুই হাজার সমর্থককে ওই সব গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছে।’ গ্রামে সবার উপস্থিতি ছাড়া নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু হবে বলে প্রশ্ন করেন তিনি।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মহসিনা হক বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমি তো আর সরকার দলের প্রার্থী নই। কাজেই আমার ওত ক্ষমতা হয়ে উঠেনি যে আমি নৌকার সমর্থকদের গ্রাম থেকে বের করে দেব।’
এ সময় মহসিনা হক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘রিপন পাটোয়ারী দেখিয়ে যাক তাঁর কোন সমর্থক বাইরে আছে। দেখাতে পারলে আমি নিজে তাদের বাড়িঘরে নিয়ে যাব। আমার যে এক হাজার সমর্থক গ্রাম ছাড়া আছে, রিপন পাটোয়ারী কি তাদের গ্রামে উঠিয়ে দিবে।’
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘কতজন গ্রাম ছাড়া আছে- তার সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই। প্রার্থীদের দাবি করা সংখ্যার চেয়ে আরো কম হবে। তবে, এতটুকু বলতে পারি সংঘাতহীন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’