সাংসদের বিরুদ্ধে রাবি উপাচার্যকে হুমকির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন রাজশাহীর গোদাগাড়ী-তানোর আসনের সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে তাঁকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। আজ বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপ-উপাচার্য, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সামনেই সংসদ সদস্য লোকজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দপ্তরে এসে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি ও ‘খারাপ ভাষায় অপমান’ করেন বলে জানান উপাচার্য। তবে সংসদ সদস্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহীতে অবস্থিত বেসরকারি শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। সেই কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সংসদ সদস্য ওমর ফারুক। সম্প্রতি কলেজে একাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ম ভঙ্গ করে ভর্তি করানো হয়। এ কারণে নিয়মমাফিক ওই কলেজকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।এতেই উপাচার্যের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সংসদ সদস্য। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীসহ চারজনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে এসে হাজির হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে অভিযোগ করেন, ‘আজ (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎকদের পদোন্নতি নিয়ে বৈঠক করার সময় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক আমাকে ফোন করেন। আমি বৈঠকে আছি- এই বলে পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। এ কথা শুনে ফোনেই উচ্চবাচ্যে কথা বলতে শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে ওমর ফারুক আমার অফিসে আসতে চান। কথা বলার ১০ মিনিটের মাথায় তিনি লোকজন নিয়ে আমার দপ্তরে চলে আসেন।’
উপাচার্য আরো বলেন, ‘যেহেতু তিনি একজন জনপ্রতিনিধি, তাই আমি বৈঠক বন্ধ করে আমার অফিসে তাঁদের নিয়ে বসি। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রেজাউল করিম বাদলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই সংসদ সদস্য কয়েকজন লোক নিয়ে আমার অফিসে খুবই খারাপ ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। তিনি যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে আমি মনে করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে অপমান করা হয়েছে।’ সংসদ সদস্য ওমর ফারুক শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ নিয়ে কথা বলতে এলেও তা নিয়ে কোনো কথা বলেননি, তিনি হুমকি দেওয়ার জন্যই দপ্তরে এসেছিলেন বলে অভিযোগ করেন উপাচার্য।
তবে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফোনে স্যারের অনুমতি নিয়েই তাঁর কক্ষে গেছি। যদি তাঁকে লাঞ্ছিত করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে অনুমতির প্রয়োজন ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে রাজনীতি করছি। কোনোদিন আমার নামে সংবাদপত্রে নেগেটিভ নিউজ ছাপা হয়নি। আজ তিনি (উপাচার্য) কীভাবে আমার নামে অভিযোগ করলেন, বুঝতে পারছি না। তাঁর সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আবার তাঁর কাছে কোনোদিন কোনো আবদার নিয়েও যাইনি।’
ওমর ফারুক চৌধুরী আরো বলেন, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক শাহ মখদুম কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছিলেন। ওই সময় কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরে অনুমোদন না থাকায় কলেজকে জরিমানা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা। ওই জরিমানা মওকুফের জন্য কথা বলতেই উপাচার্যের দপ্তরে যাওয়া।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী দীপায়ন সরকার দ্বীপ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘উপাচার্য মহোদয়ের সাথে এমপি সাহেবের সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’ তিনি বলেন, শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজকে একটি কারণে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এমপি স্যার কথা বলতে গিয়েছিলেন। সেখানে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এর বেশি কিছু নয়।’