উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মাছ লুটের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক সমর্থন করার জেরে মৎস্যচাষিদের অর্ধকোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের সোনার চর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্য মো. সবুজ খলিফা। এ সময় সমিতির আরও কয়েক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সবুজ খলিফা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে তাঁরা প্রান্তিক পর্যায়ের ২১ জন জেলে মিলে সরকারের সব নিয়ম মেনে ‘সোনার চর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’ গঠন করে সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ করা শুরু করেন। ২০১১ সালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বদ্ধ জলমহাল ইজারার নোটিশ হলে সমিতির সভাপতি নূর আলম ফরাজির নামে চর মোন্তাজ ইউনিয়নে ‘কাসেম খার ডোস’ নামে বদ্ধ একটি জল মহাল ইজারা নিয়ে সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন। ওই জল মহালে তাঁরা মাছের পাশাপশি শাক-সবজি উৎপাদন, গরু, ছাগল ও মহিষ পালন শুরু করেন। প্রায় ১৫টি পরিবারের অর্ধ শতাধিক সদস্য দিনরাত পরিশ্রম করে মৎস্য খামারটিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি তিন বছর পরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা নবায়ন করে এ কার্যক্রম চলমান রাখেন তাঁরা।
সবুজ খলিফা আরও জানান, বর্তমান বছরের এপ্রিল মাসে ইজারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নবায়ন দেওয়া হয়নি। শুধু এই জল মহালটি নয় জেলার কোনো জল মহালেরই ইজারা নবায়ন করেনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। ইজারা নবায়ন না হওয়ায় সোনার চর মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষ থেকে ইজারা নবায়নের জন্য জেলা প্রশসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সবুজ খলিফা বলেন, ‘আমরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করেছি। আমি মৎস্যজীবী লীগের ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক। নির্বাচনের পর থেকে বিএনপিনেতা ডা. জহির উদ্দীন আমিসহ সমিতির অনেকের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জলমহালের ইজারা নবায়ন হয়নি এই সংবাদ পেয়ে তিনি ও চরমোন্তাজ ইউপি সদস্য বেল্লাল খান মাছ চাষ করতে হলে সমিতির কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। যদি দাবি করা টাকা না দেওয়া হয় তাহলে মাছ চাষ করতে পারব না বলে হুমকি দেন। আমরা টাকা না দেওয়ায় গত ৭ জুন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজে বেল্লাল খানসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হঠাৎ জলমহালে হামলা চালিয়ে ৩০ লাখ টাকার মাছসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার সামগ্রী লুট করে নিয়ে যান। পরে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো এলাকা ছেড়ে গলাচিপা ও পটুয়াখালীতে আশ্রয় নেয়। এ বিষয় নিয়ে রাঙ্গাবালী থানায় গেলে কোনো মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। পরে আমি বাদী হয়ে পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করি। আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশনা দেন।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রনজিত কুমার জানান, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কিছু ভিডিও এবং ছবি তিনি পেয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য যা যা করণীয় তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দীন আহমেদ জানান, তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ গুজব ছড়াচ্ছে। তিনি স্থানীয়দের দাবির মুখে একটি খালে বাঁধ কেটে দিয়েছেন মাত্র।
সাংবাদিকদের কাছে ঘের লুটের ভিডিও এবং ছবি রয়েছে—এ বিষয়ে ডা. জহির উদ্দীন আহমেদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ঘটনার সময় তাঁর সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ ছিল না কেন জানতে চাইলে তার উত্তরও এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ওবায়দুর রহমান জানান, জলমহাল সরকারের এক নং খাস খতিয়ান ভুক্ত সম্পত্তি। সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষে এটির দেখভাল করে রাজস্ব বিভাগ। জলমহালে কী হবে না হবে এটি একান্তই রাজস্ব বিভাগের বিষয়। এখানে উপজেলা পরিষদের কোনো কাজ নেই। যদি কোনো বাঁধ অপসারণ করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটা করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের কাজ এটা নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জানান, রাঙ্গাবালীর ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার।