ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার রায় ১৬ জানুয়ারি
নোয়াখালী সুবর্ণচরে ধানের শীষে ভোট দেওয়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। আগামী ১৬ জানুয়ারি মামলার রায় নির্ধারণ হলেও প্রকৃত বিচার নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট না দেওয়ায় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন নোয়াখালী সুবর্ণচরের এই নারী। চরজুবিলী ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ধর্ষণ করেছিল তাঁকে। ন্যক্কারজনক এই ঘটনার পাঁচ বছর কেটে গেলেও এখনও বিচার পাননি ভুক্তভোগী ওই নারী। এখন ভোট এলেই আতঙ্কে থাকেন ওই নারী ও তাঁর পরিবার।
নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। কোনো নির্বাচন এলেই ভয় কাজ করে- না জানি আবার কোন বিপদ হয় কিংবা আবার কেউ ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে বলে।’
এই নারী জানান, তিনি কোনো রাজনীতি করেন না। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীও কখনও ছিলেন না। তখনকার এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ও আলোচিত ঘটনা শুনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আ স ম আবদুর রবসহ দেশ-বিদেশের মানবাধিকার সংঘঠনগুলো তাঁকে হাসপাতালে দেখতে আসেন এবং তাঁকে আইনগত সহযোগিতা করেন। শুধু বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক তাঁর পছন্দের। তাই সেই প্রতীকে ভোট দেওয়ায় এমন বর্বর ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ওই ঘটনার পর সুবর্ণচরের চরজব্বার থানায় একটি মামলা করলেও পুলিশ মামলা নেওয়ায় তৎকালিন ওসি নিজাম উদ্দিনকে ক্লোজ করা হয়। মামলায় তৎকালীন ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগনেতা রুহুল আমিনসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অন্যতম দুই আসামি এখনও অধরা। তদন্তকারী ডিবির তত্কালীন পরিদর্শক (তদন্ত) জাকির হোসেন বলেন, আলোচিত এই ঘটনায় ১০ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানব্দি দেন আদালতে। ১২ ধর্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। বহুল আলোচিত ঘটনায় মেম্বার রুহুল আমিনকে উপজেলা আওয়ামী লীগ তখন বহিষ্কার করেছিল।
মামলার আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসূল মামুন বলেন, ‘এর মধ্যে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। রায় ঘোষণা জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মামলায় আসামিরা প্রত্যক্ষভাবে অপরাধী প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আদালত এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক রায় দেবেন।’
কী হয়েছিল সেদিন?
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর বিকেলে এলাকার সবাইকে স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ওই আমিও ৩০ ডিসেম্বর ভোট দিতে যাই। ভোটকেন্দ্রে যেতেই স্থানীয় কয়েকজন যুবক আমার ভোট হয়ে গেছে বলে বাড়ি চলে যেতে বলে। এ সময় আমি বলি এত কষ্ট করে টোকেন খুঁজে বের করে ভোট দিতে আসছি। আমার ভোট দিতেই হবে। এরপর ওই যুবকরা আমাকে ভোট দিতে সুযোগ করে দেয়। তারপর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখি একটি টুলের ওপর ব্যালট পেপার রাখছে। কোনো গোপন কক্ষও ছিল না। আমি ব্যালট হাতে নিয়ে প্রকাশ্যে ধানের শীষে সিল দিয়েছি। তারপর তারা আমার ব্যালট পেপার ভাঁজ করে দিতে চায়। আমি সেটা করতে না দিয়ে ব্যাটলটি বাক্সে রেখে চলে আসি।’
এই নারী জানান, রুহুল আমিন ও তাঁর সঙ্গে থাকা যুবকরাতখন সময় তাঁকে দুই আঙুল দেখিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করে ও ক্ষুব্ধ মনোভাব ব্যক্ত করে। পরে ওই দিন ভোট শেষ হলে রাতে বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তাঁর স্বামী ও তার ছেলেকে বেঁধে ফেলে।। এরপর হাত-পা চেপে ধরে তাঁকে একের পর একজন করে ধর্ষণ করে। এই সময় তাঁর চিৎকার যেন বাহিরের কেউ শুনতে না পায় তাই ঘরের বাইরে একটি সেলোমেশিন চালিয়ে রেখেছিল ধর্ষণকারীরা। পরে সকালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে ঘটনা জানাজানি হয়। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় বয়ে যায় নোয়াখালীসহ সারা দেশে।
তবে এখন পর্যন্ত মূল আসামিসহ আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে ওই পরিবারের লোকজন।
মামলার আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রসুল মামুন বলেন, আশাকরি আদালত ঘটনার প্রকৃত বিচার করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করবেন।