ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের হুমকিতে ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। ফলে কমে গেছে উপরিভাগের পানির ব্যবহার। এই চাপ গিয়ে পড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। দুই কোটি জনসংখ্যার মেগাসিটি ঢাকায় বসতবাড়ি ও কলকারখায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ পানির জোগান আসছে মাটির নিচ থেকে। গবেষকরা বলছেন, এর ফলে প্রতিবছর দুই মিটার করে নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। এতে ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে মাটির গুণগত মানও। সবকিছু বিবেচনায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ঢাকা ওয়াসা মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে সামান্যই।
ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরে প্রতি বছর বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণে গভীর নলকূপ স্থাপন করে মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করছে ঢাকা ওয়াসা। এক দশক আগে ৬০০ থেকে ৭০০ ফুট মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করা গেলেও মাত্র কয়েক মাস আগে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে গিয়ে বিপত্তি বাধে। ৭০০ ফুটের সে স্তর গিয়ে ঠেকেছে ৯৫০ ফুটে। ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে মাটি পরীক্ষার জন্যও মাটির স্তর খুঁজে পাওয়া অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গবেষণা বলছে, ১৯৯৬ সালে ঢাকায় পানির স্তর ছিল ২৫ মিটারে। যা ২০০৫ সালে ৪৫, ২০১০ সালে ৬০ এবং ২০২৩ সালে এসে ৭৫ মিটারে নেমেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এটি নেমে যেতে পারে ১২০ মিটারে।
তথ্য বলছে, ২০১২ সালে ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়। মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের হার ৭৮ থেকে ৩০ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তারা। যেটি ২০২২ সাল নাগাদ ১৩ ভাগ অর্জন করতে পেরেছে ঢাকা ওয়াসা।
ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা যেভাবে পানি উত্তোলন করছি, সে অনুযায়ী পানি কিন্তু পুর্ণভরণ হচ্ছে না। যার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।’
ভূ-তত্ত্ববিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘রাস্তার ধারে যদি আমরা কয়েকটা কূপ বসাই, সেটার ফিল্টার করে যদি পানি পাঠানোর ব্যবস্থা করি, তাহলে দেখা যাবে আমার জলাবদ্ধতা থাকছে না, আবার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর যেটা নিচে নেমে যাচ্ছে সেটা আংশিক হলেও কিছুটা ভারসাম্য করতে পারছে।’
কয়েক দশক আগেই ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেন গবেষকরা। ২০২৪ সালে সেটি বিপদসীমা অতিক্রমের পথে বলে মত তাদের। তাই সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।