ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি, টইটম্বুর সড়ক
ভোর থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। মুষলধারার বৃষ্টিতে টইটম্বুর বিভিন্ন রাস্তাঘাট। অলিগলি ছাড়িয়ে কোথাও কোথাও প্রধান সড়কও ডুবে গেছে। জলাবদ্ধতায় ঠিকমতো চলতে পারছে না যান। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী। এ সময়ে অনেকটা ক্রেতা শূন্য ছিল বাজার। আবহাওয়া অফিস বলছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় ছয় ঘণ্টায় এই বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১৩০ মিলিমিটার।
চলতি মৌসুমে ৬ ঘণ্টায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড
আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। এর আগে গত ২৭ মে রাজধানীতে এক দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২২৪ মিলিমিটার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ওই বৃষ্টি হয়েছিল। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, নিয়ম অনুসারে প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর বৃষ্টি পরিমাপ করা হয়। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। পরের তিন ঘণ্টায় পরিমাণ আরও বেড়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭০ মিলিমিটার। সব মিলে ৬ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড ১৩০ মিলিমিটার।
জলাবদ্ধ রাজধানী
পানি জমেছে পুরো সেগুনবাগিচা এলাকায়। জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর পানিতে ডুবে গেছে। হাজারীবাগ, সেন্ট্রাল রোড, কলাবাগান, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিনরোডে, নিউমার্কেট, আসাদ গেট, মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ, কল্যাণপুরেও জমেছে পানি। মিরপুরের টোলারবাগের রাস্তা সেই আগের মতোই; সামান্য বৃষ্টিতেই যেখানে পানি জমে, সেখানে ভারী বর্ষণে টইটম্বুর আজ। এ ছাড়া মিরপুরের বেশির ভাগ এলাকার সড়কেই পানি জমেছে।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার ও কাজী আলাউদ্দিন রোড, বংশাল রোড, লক্ষ্মীবাজার, তাঁতীবাজার নবাবপুর রোড, ধোলাইখাল রোডে বয়ে যাচ্ছে স্রোত। হাঁটুপানির দুর্ভোগে পড়েছেন খুব প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষগুলো। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস, মোটরসাইকেল বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। অনেকে আবার ঠেলে সরানো ও চালু করার চেষ্টা করছিলেন।
ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট যানজট নিয়ে ডিএমপির সতর্কতা
বৃষ্টিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় যানজটের সতর্কতার কথা জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, তুমুল বৃষ্টিতে রাজধানীর যেসব এলাকা তলিয়ে গেছে সেসবের মধ্যে আছে ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমণ্ডি রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কুলার রোড, ধানমণ্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড ও মিরপুর মাজার রোড। তাই এসব এলাকায় চলাচলকারী জনসাধারণকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ রইল।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমি বায়ু এখন অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকার কারণেই এই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এই মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এবং ভারতের আসাম হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু অতিমাত্রায় সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। দেশের ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৩০৯ মিলিমিটার। এ ছাড়া সন্দ্বীপে বৃষ্টি হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার, সীতাকুণ্ডে ১০২ মিলিমিটার।
আরও ৫ দিন থাকতে পারে বৃষ্টি
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা আরও অন্তত তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকবে। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে অতিমাত্রার সক্রিয়তা কমে আসবে। ফলে কাল থেকে মাঝেমধ্যে হালকা আবার মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও এমন ভারী বর্ষণ হবে না।