‘বিদেশে রমজান আইলে দাম কমে আর বাংলাদেশে বাড়ে’
আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের আত্মসুদ্ধি ও সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। রমজানকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। ইফতারের সামগ্রী খেজুর, বিভিন্ন ধরনের ফল, চিড়া ও মুড়ির দাম বেড়ে চলেছে হু হু করে। দাম বেড়ে যাওয়ায় দোকানিদের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। এ নিয়ে বিক্রেতারাও আছেন অস্বস্তিতে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজান সংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ পণ্যেরই দাম বেড়ে গেছে। বাজার মনিটরিং ও পণ্যমূল্য তদারকির অভাবে নিত্যপণ্যের বাজার টালমাটাল হচ্ছে বলে মনে করেন দোকানদাররা।
সকালে রাজধানীর কাজীপাড়ার ফল দোকানি মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘হুনছি বিদেশে রমজান আইলে সব কিছুর দাম কমে আর বাংলাদেশে শুধু বাড়ে! যেখানে দুর্নীতিতে ভরা সেখানে কি আর দাম ঠিক থাকে? রোজার জন্য খেজুর, ফলসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, এই দেশে কোনো কিছু ঠিক থাকে না। সেখানে রমজানের আগে তো প্রশ্নই উঠে না। সরকার যদি খুব চাপ সৃষ্টি করে তখন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লোকজন বাজারে আমদানি কমিয়ে দেবে অথবা অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মজুদ করে রাখবে। তখন আবার তাদের কথা মতোই সব চলবে। সঠিক তদারকির অভাবেই এটা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ১০ কেজির খেজুরের কার্টনে ২০০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ১৮ কেজির আপেলের কার্টনে বেড়েছে ৩০০ টাকা করে। ১৪ কেজি মাল্টার কার্টন আগে ছিল এক হাজার ৫৫০ টাকা। তা বেড়ে এখন হয়েছে এক হাজার ৭০০ টাকা। তবে বেদানা ও আঙুর আগের দামেই আছে।
শেওড়াপাড়ার বিপ্লব নামের এক ফল বিক্রেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আফ্রিকান আপেল প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা হয়েছে। নাশপাতি ফল ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় সব ফলের দাম টুকটাক বেড়েছে।
মরিয়মের দাম কোথাও কম, কোথাও বেশি
ফার্মগেটের ফল বিক্রেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সৌদি আরবের মরিয়ম খেজুর বিক্রি করছি ৮০০ টাকা। আজ কিনেছি ৯০০ টাকায়। এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আপেল কেজিপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে।’
কারওয়ানবাজারের খেজুর ও ফল বিক্রেতা রহিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ফরিদা খেজুরের কেজি ২৬০ টাকা। সৌদি আরবের মরিয়ম খেজুর ৪০০ টাকা। বরই খেজুর ১৪০ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন খেজুরের দাম বিভিন্ন রকম। একেক দোকানদার একেক রকম বিক্রি করেন। যার কাছ থেকে যেমন নেওয়া যায়। তবে আপেল ও মাল্টার দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে।
সৌদি আরবের মরিয়ম খেজুরের দাম একেক স্থানে একেক রকম কেন জানতে চাইলে রহিম বলেন, ‘আমরা যেটা বিক্রি করছি সেটার দাম ৪০০ টাকা একই খেজুর অন্য দোকানে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকাও বিক্রি করছে।’ তিনি বলেন, ‘দাম বাড়াতে বা কমাতে আমাদের খুব একটা লাভ হয় না। আমরা যখন যেমন কিনি তখন তেমন দামে বিক্রি করি। বরং ক্রেতাদের কাছে আমাদেরই কথা শুনতে হয়।’
তবে পাশের একটি দোকানে দেখা যায় মরিয়ম খেজুরের দাম এক হাজার টাকা। কারণ জানতে চাইলে দোকানি বলেন, ‘এটা ভালো বেশি তাই দাম বেশি।’
দাম বেড়েছে মুড়ি-চিড়ার
কারওয়ান বাজারের কয়েকটি মুড়ি ও চিড়ার দোকান ঘুরে দেখা যায়, কেজি প্রতি মুড়ি ৬০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চিড়া বিক্রি হতে দেখা যায়, ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। জানতে চাইলে তাঁরা জানান, মুড়ি গত পরশু থেকে আজ পর্যন্ত ১০ টাকা কেজি দরে বেড়েছে। আর যে চিড়া গতকাল ৬৮ টাকা করে কিনেছেন সেই চিড়া আজ ৭৫ টাকা দরে কিনতে হয়েছে তাঁদের।
ক্রেতারা কী বলেন
কাজীপাড়ার এক দোকানে খেজুর ও আপেল কিনতে আসেন মাকফিরা খাতুন নামের এক নারী। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যে আপেল গত পরশুও কিনেছি ১৫০ টাকায় আজ সেই আপেল ১৭৫ টাকা দিয়ে কিনতে হলো। সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়ে গেছে। কিছু করার নেই। আমরা সব দিক থেকেই ঠকি সব সময়।’
কারওয়ানবাজারে খেজুর কিনতে আসেন আবেদ খান। এনটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘খেজুর ছাড়া ইফতার করি না। কিন্তু বাজার যে গরম। এসবে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রোজার প্রথম দিকে অনেক ব্যবসায়ী এক সঙ্গে অনেক কিনতে চায়। সেক্ষেত্রে কিছু সময় দাম ওঠা-নামা করে। তবে যদি এটার পরিমাণ বেশি হয় সেক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীর আড়তে কাজ করছি। এখানে ৯ জনকে ১৫ দিন থেকে এক বছর পর্যন্ত জেল দেওয়া হয়েছে। কাঁচা আম মেডিসিন দিয়ে দ্রুত পাকানোর জন্য এক হাজার মণ আম ধ্বংস করেছি। ৪০ মণ পচা খেজুর নষ্ট করা হয়েছে। আর একজনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পুরো রমজান মাসব্যাপী আমাদের এই অভিযান চলবে।’