জিএসকে বন্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, বিক্ষোভ চলছে
ওষুধ তৈরির বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইনের (জিএসকে) কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকরা। আজ রোববার চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকায় ওই কারখানার সামনে দিনভর বিক্ষোভ করে তারা।
গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশে নিজেদের কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক ওই প্রতিষ্ঠান। কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর থেকে চারদিন ধরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কারখানায় অনশন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছে।
সমাবেশে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, গত ছয় মাসে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা লাভ করেছে। তাই এখানে কোনো রকম লোকসান হয়নি বরং ষড়যন্ত্র করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা জানায়, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ইন্ধন দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাকিস্তানের নাগরিক ইরাম শাকির। জানা যায়, ইরাম শাকির দ্বিগুণ বেতনে বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় কর্মরত। তিনি গত ১ জুলাই ইন্দোনেশিয়ায় চলে যান। শ্রমিকদের অভিযোগ, ইরাম শাকির দুই বছর ধরেই কারখানাটি বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন।
এ সময় চাকরি হারানো শত শত শ্রমিক তাদের চাকরিতে বহাল করার দাবি জানায়।
গ্লাক্সো শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা টোটালি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাদের দেশের এবং পাকিস্তানি একজন নাগরিক ছিল। তিনি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাঁর নেতৃত্বে দুই বছর পর্যন্ত ষড়যন্ত্র করে গত ২৬ জুলাই তাঁরা বিকেল ৫টায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। সেই থেকে আজকে চারদিন আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’
এ ছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আজম বলেন, ‘গত বছরও আমরা শ্রমিকরা ৫০ হাজার টাকা ফাইভ পারসেন্ট পেয়েছি লাভের টাকা। যদি লস হয়ে থাকে, আমরা এক হাজার শ্রমিক যদি পঞ্চাশ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকি, তাহলে কত টাকা আমরা লাভ পেয়েছি। গত বছর এ কোম্পানি ৮২ পারসেন্ট শেয়ারের বিপরীতে ৫৪ কোটি টাকা আমাদের দেশ থেকে ইংল্যান্ডে নিয়ে গেছে এবং গভর্মেন্টেরগুলো গভর্মেন্টকে দিয়েছি, আমাদেরগুলো আমরা নিয়েছি। আমাদের যে অ্যানুয়েল রিপোর্ট (বার্ষিক প্রতিবেদন), সেখানে আপনি লসের (ক্ষতি) কোনো কিছু দেখবেন না। উনারা ঢালাওভাবে একটা মিথ্যা প্রচার করছে যে, আমাদের এখানে লস। আপনাদের উদ্দেশে আমি একটা কথাই বলতে চাই, ‘লস যদি হয়েই থাকে, লস কভার করার জন্য তিনি কি কোনোদিন এই চিটাগাং সাইটে আইসা বসছেন?’
আন্দোলন কর্মসূচির চতুর্থদিনে শ্রমিক সমাবেশে স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক ফেডারেশন একাত্মতা প্রকাশ করে।
সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘আমরা বাঙালি জাতি, সেই ১৯৭১ সালের মতো আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার। কারণ সে স্বাধীনতাবিরোধীরা এই কোম্পানির দায়িত্ব নিয়েছিল।’
দিদারুল আলম বলেন, ‘আমাদের গ্লাসকো ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা চাই অবিলম্বে যারা উচ্চপর্যায়ে গ্লাক্সোর যারা নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন, উনাদেরকে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আমরা চাই এই জিএসকে একটা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যার দ্বারা মানুষের জীবন সম্পূর্ণই নির্ভর করে। আমরা চাই পুনরায় জিএসকে চালু হোক।’ তিনি আরো বলেন, ‘চাই পুনরায় চাকরিতে বহাল, আমরা কোনো বেনিফিট চাই না। আমরা চাই চাকরি।’