‘সভাপতি ফাওখোর, সাধারণ সম্পাদক অছাত্র’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ফাওখোর ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের ছাত্রত্ব নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা। ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসক্লাবে ‘শাবি শাখা ছাত্রলীগের কর্মী’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
ওই কর্মীদের পথভ্রষ্ট উল্লেখ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজিদুল ইসলামের ইন্ধনে তাঁর কর্মীরা এ কাজ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে দুই একজন ছাড়া সবাই জুনিয়র পর্যায়ের কর্মী। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের উপমুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক লক্ষণ চন্দ্র বর্মণ। এ সময় পদধারীদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সদস্য কাজী তৌফিকুর রহমান, বাছির মিয়া। এদের সবাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজের অনুসারী।
লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন লক্ষণ চন্দ্র বর্মণ। রুহুল আমিনকে অছাত্রের পাশাপাশি ফাওখোর, চোর, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ও নিয়োগ বাণিজ্যের হোতা বলে উল্লেখ করা হয় ওই লিখিত বক্তব্যে। এ সময় এ ধরনের সব অপরাধের প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে বলে সাংবাদিকদের জানান। তাঁরা বলেন, কোনো টং দোকানদার যখন তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনেন তখন আমরা লজ্জিত বোধ করি। এ ছাড়া সবার সঙ্গে বাজে ব্যবহার, ছাত্রদল নেতার অভ্র কুমার দাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও আনা হয়।
এদিকে ইমরান খানের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্ন তুলে তাঁরা বলেন, দীর্ঘ আট বছরে ইমরান খান ১৪০ ক্রেডিটের মধ্যে মাত্র ২৪ ক্রেডিট সম্পন্ন করেছেন, যা অত্যন্ত হাস্যকর। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না, তিনি কিভাবে একটি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাকে ও আমার ইউনিটকে বিতর্কিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আবু সাইদ ও সাজিদুল ইসলাম সবুজের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে কতিপয় পথভ্রষ্ট কর্মী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যারা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। অচিরেই এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে ইমরান খান বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি আমার কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারিনি। অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে হাইকোর্ট রুল জারি করা হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু বিচারাধীন সে ক্ষেত্রে কারোরই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা সমীচীন নয় বলে মনে করছি।
পাল্টা অভিযোগের ব্যাপারে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ বলেন, সংগঠনের যেকোনো পদ প্রতিটি নেতার কাছে আমানত স্বরূপ। সংগঠনের স্বার্থে প্রতিটি ব্যক্তির পদে ও ওজন রেখে চলা উচিত। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এসব বিতর্কিত ব্যক্তির উচিত নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করে সংগঠনকে কলঙ্কমুক্ত করা।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়গুলো এর আগে পেশ করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তাঁরা। এ ছাড়া অভ্র কুমার দাসকে কুখ্যাত ছাত্রদল সন্ত্রাসী বললেও তাঁর সঙ্গে তাদের নেতাকর্মীর সখ্যতা কেন জানতে চাইলে তার স্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেনি কেউই। কেন্দ্রের কাছে নতুন কমিটি চাচ্ছেন কি না কিংবা পরোক্ষভাবে নতুন কমিটির জন্য এ সংবাদ সম্মেলন কি না- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, তাঁরা বিতর্কিত সভাপতি ও অছাত্র সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এ ছাড়া সভাপতি-সম্পাদকের অধীনে তাঁরা কোনো প্রোগ্রামে অংশ নিবেন না বলে জানানো হয়। ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও তাঁরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের ব্যনারে করবেন না বলে জানান।