রাবি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শাশুড়ির অভিযোগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি)এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপমান-অপদস্তকরণ, অশালীন আচরণ, প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাভাবে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন তাঁর শাশুড়ি।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম রুখসানা পারভীন। তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রুখসানার শাশুড়ি রোকেয়া বেগম লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে রুখসানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তবে রুখসানা পারভীন বলেছেন, এটি তাঁদের পারিবারিক বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার কিছুই নেই।
অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সময় ওই শিক্ষিকার ননদ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দিলারা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগপত্রের সঙ্গে তাঁরা প্রমাণ হিসেবে রুখসানা পারভীনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের কিছু রেকর্ডিং জমা দিয়েছেন।
রেকর্ড করা অডিও ক্লিপগুলোতে রুখসানা বেগমকে প্রকাশ অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিতে শোনা গেছে।
লিখিত অভিযোগপত্রে রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র পুত্রের সাথে রুখসানা পারভীনের বিবাহের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে এবং বর্তমানেও নানাভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের অন্যদের চরমভাবে অপমান-অপদস্থ, অরুচিকর আচরণ এবং নানা ধরনের হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে। এই মহিলা (রুখসানা পারভীন) আমাকে প্রাণনাশের হুমকিসহ ভাষায় অপ্রকাশযোগ্য গালাগালি এবং নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করে আসছে।’
রোকেয়া বেগমের মেয়ে দিলারা সুলতানা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের (রুখসানার স্বামী) সাথে বিয়ের পর থেকে সে (রুখসানা) আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার জন্য তাকে চাপ দিত। আমার ভাই যোগাযোগ করলে সে তার সাথেও খারাপ আচরণ করে। কোনো কারণ ছাড়াই প্রায় সময় আমাদের ফোন দিয়ে অশালীন-অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ হুমকি-ধমকি দেয়। আমরা বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’
পারিবারিক বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন জানিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে দিলারা বলেন, ‘আমরা কার কাছে বিচার চাইব? বিভিন্ন সময়ে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের সাথে গণ্ডগোল অব্যাহত রেখেছেন। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে তার (রুখসানা) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) কাছে প্রতিকার চাইছি।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এটি তাদের পারিবারিক বিষয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করব।’
অভিযোগের বিষয়ে রুখসানা পারভীন বলেন, ‘আমি অভিযোগের বিষয়ে জানি না। এটি আমাদের পারিবারিক বিষয়। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’
এর আগে গত ২৭ জুলাই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুখসানা পারভীনের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে বিভাগের অন্য শিক্ষকদের নামে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাসিমা জামানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন একই বিভাগের ১১ শিক্ষক। এরপর ৩১ জুলাই শিক্ষক রুখসানা পারভীন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক নাসিমা জামানের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ওই ১১ শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। এতে যৌন হয়রানি, অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
এরপর ২ আগস্ট বিভাগের সভাপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ১১ শিক্ষক। পরে ৪ আগস্ট তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করে সভাপতি ও শিক্ষিকার করা যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
শিক্ষকদের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭৫তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ওই বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে রুখসানার করা যৌন হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।