আন্দোলন স্থগিত করা নিয়ে রাবিতে বিভক্তি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন স্থগিত করা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের
দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখাও আগামী ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখতে চাইছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করতে নারাজ বাম-সমর্থক শিক্ষার্থীরা।
রাবি ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধের পর আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকায় সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধিদের আলোচনার পর কেন্দ্রীয় আন্দোলনকারীদের নির্দেশ অনুযায়ী আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় রাবি শাখা। তবে তা মানতে রাজি নয়, রাবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।
সোমবার রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবারও আন্দোলনে নামার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন পেজ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে সেই পোস্ট শেয়ার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবারও আন্দোলন চালিয়ে গেছে একদল শিক্ষার্থী। অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্যারিস রোডে পৌঁছে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয় সংস্কার আন্দোলন রাবি শাখার নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
সেখানে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে ফিরিয়ে নিলেও, শিক্ষার্থীদের একাংশ সিনেট ভবনের সামনেই অবস্থান নেয়। পরে তারা সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী সংগঠনগুলো। ছবি : এনটিভি
কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, রাবি শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী আমরা এক মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু আজ সকালে এক ধরনের কুচক্রী মহল ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনে নিয়ে আসে। তারা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং নিজেরা ক্রেডিট নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি ফিদেল মনির বলেন, ‘সবাই আশ্বাস দিয়েছে, কিন্তু আস্থা কেউ দেয়নি। সেই জায়গা থেকে সরকার সব সময় চেয়েছে এটাকে প্রতিহত করার। এ অবস্থায় আমরা চাই অবিলম্বে কোটা সংস্কার হোক।’
এদিকে দুপুর ২টার দিকে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে ফিদেল মনির বলেন, ‘কোটা সংস্কারের পক্ষে যে কমিটি ছিল, তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। আমরা চাচ্ছি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে আন্দোলনটা হোক। সে জায়গা থেকেই এই প্রেস ব্রিফিং।’ এ সময় ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শাখার কর্মী উম্মে কুলসুম কনি ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মুন্নাফ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আাগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। আমাদের আন্দোলনকে কুচক্রী মহল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে, আপনারা তাদের সাথে মিশে আন্দোলনে যাবেন না।’ এ সময় তিনি আগামী ৭ মে পর্যন্ত রাবিতে কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত রোববার থেকে এই আন্দোলন বিশাল আকার ধারণ করে। আন্দোলনে অংশ নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।