মঙ্গল শোভাযাত্রায় ‘সোনার মানুষের’ তালাশ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তুলির শেষ আঁচড় নিয়েই সবাই ব্যস্ত। কেউ মোটিফ তৈরির কাজ করছেন। কেউবা রঙতুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুলছেন মনের সব ক্যানভাস। আজ শুক্রবার বিকেলে চারুকলা অনুষদ ঘুরে দেখা যায় এই দৃশ্য।
আবহমান বাংলার লোকজ নানা মোটিফের মধ্য দিয়ে সোনার মানুষ হওয়ার আহ্বান আর বিশ্বমানব হওয়ার আগে চাই শ্বাশত বাঙালি হওয়ার প্রত্যয়- এমন বোধে শুদ্ধ সংস্কৃতি দেশের প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়াই নববর্ষের অঙ্গীকার।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ এর মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাউল সম্রাট সাঁইজি লালনের অমর সৃষ্টি ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’কে করা হয়েছে প্রতিপাদ্য বিষয়। আর ছায়ানটের মূল সুর- ‘বিশ্বায়নের বাস্তবতায় শেকড়ের সন্ধানে।’
আয়োজকরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় বরাবরের মতো বাংলা সংস্কৃতির সব কিছুই থাকবে। আর সে লক্ষ্যেই গত ২৭ মার্চ থেকে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এবারের শোভাযাত্রায় মোট আটটি মোটিফ তৈরির প্রস্তুতি থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে একটি মোটিফ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে সাতটি মোটিফ থাকবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
এগুলো হলো- মা পাখির সঙ্গে ছানা, হাতি, মাছ ও বক, মহিষ, সূর্য, টেপা পুতুল এবং সাইকেলে মা ও মেয়ে।
এসবের পাশাপাশি কেউবা আবার হাঁড়ি-পাতিলের ওপর কারুকার্য তৈরি করছেন। কেউবা ব্যস্ত মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহার্য বেতের তৈরি বিভিন্ন প্রতিকৃতি অঙ্কনে।
এবার শোভাযাত্রায় নতুন মোটিফ থাকছে মহিষ। নতুন এই মোটিফের বিষয়ে জানতে চাইলে আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য জাহিদ বলেন, মহিষ আসলে শান্ত ও নিরীহ একটি প্রাণী। মানুষের ধীরস্থিরের প্রতি নজর দিতে এটা করা হয়েছে। মূলত মানুষকে বুঝতে পরলেই সোনার মানুষ হওয়া যাবে, এটাই এবারের মূল উপজীব্য।
আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শাহবাগ মোড় হয়ে শেরাটন হোটেলের সামনে দিয়ে টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলা অনুষদের সামনে এসে শেষ হবে শোভাযাত্রা।
বর্ষবরণের প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বর্ষবরণে প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কোটা সংষ্কারের আন্দোলনের কারণে কিছুদিন কাজ করা যায়নি। রাতের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, নববর্ষের দিন নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করে তা মনিটরিং করার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে চারুকলার অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, কোটা সংস্কারের টানা কয়েক দিনের আন্দোলনের কারণে বর্ষবরণের কাজ অনেকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ছাত্ররা এখন টানা কাজ করছে। নববর্ষের দিন ভোরে আমাদের সব কাজ শেষ করতে পারব।
এদিকে বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ উদযাপন উপলক্ষে গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলো মধ্যে- বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সব ধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
এদিকে, নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।
নববর্ষের আগের দিন আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিবর্গ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালীমন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট থাকবে।