সেই অডিও রেকর্ডিংয়ে অসম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে : প্রাধ্যক্ষ সাবিতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিতা রেজওয়ানা রহমান বলেছেন, ‘যে অডিও রেকর্ডিংটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সেখানে অসম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাবিতা রেজওয়ানা।
‘হলের দুই হাজার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দেব’ এমন একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সে বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এসব কথা বলেন অধ্যাপক সাবিতা।
সাবিতা রেজওয়ানা বলেন, ‘এশাকে (হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা) লাঞ্ছনার বিষয়ে আমি হলের মেয়েদের বলেছিলাম যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু মেয়েরা বলে, আমরা সবাই ওই সময় উপস্থিত ছিলাম। সুতরাং আপনি নির্দিষ্ট কয়েকজনকে বহিষ্কার করতে পারেন না। বহিষ্কার করলে সবাইকে করতে হবে। তখনই আমি এই কথাটি বলেছিলাম। যে অডিও রেকর্ডিংটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সেখানে অসম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে।’
‘কয়েকজন মেয়ে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছিল’
মধ্যরাতে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে হলের এই প্রাধ্যক্ষ বলেন, ‘হলের বেশ কয়েকজন মেয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছিল এই বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় এশার লাঞ্ছনার ঘটনায় কাউকে বহিষ্কার করেনি। তাছাড়া ওইদিন দুপুরে হলের কিছু মেয়ে সন্দেহজনকভাবে করিডোরে ঘোরাঘুরি করছিল। তাই আমরা হল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে অভিভাবকদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যা নিরসন করতে চেয়েছিলাম।’
‘গুজবই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে’
অধ্যাপক সাবিতা বলেন, ‘একটি ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ওই হলে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ছাত্রীদের উত্তেজিত করতে গুজবই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে।’
হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাত্রীদের ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে প্রাণ রসায়ণ ও অণুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক সাবিতা এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।’ তবে এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে কোনো তদন্ত কমিটি করবেন কি না এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কিছু বলেননি।
গত ১০ এপ্রিলের পর থেকে কবি সুফিয়া কামাল হলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা বিভাগের শিক্ষক এবং আওয়ামী লীগ-সমর্থক নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি ও অনুভূতিকে পুঁজি করে স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সময় নানান রকমের গুজব এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে তাণ্ডব চালানো হয়েছে ভিসির (উপাচার্য) বাসায়।
‘তদন্তের পর জানা যাবে কারা হামলাকারী’
হামলাকারীদের পরিচয় জানতে চাইলে অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘হামলাকারীদের বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। কারণ ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্তের পর জানা যাবে আসলে কারা আসল হামলাকারী।’
গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকদের ব্যানারে ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা কর’ শীর্ষক এক মানববন্ধনের আয়োজন করে একদল শিক্ষক। সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের কেউ উপস্থিত না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘এই বিষয়ে তাঁরা আমাদেরকে কিছুই জানায়নি এবং কোনো আলোচনাও করেনি। জানালে অবশ্যই আমরা তাঁদের আন্দোলনে সমর্থন দিতাম।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, কার্যকরী সদস্য লেদার অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউটিটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ, ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান প্রমুখ।