কোটা সংস্কার : রোববার থেকে ফের আন্দোলনের হুমকি
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে জারি করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। দাবি না মানা হলে আগামী রোববার থেকে কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওই সংগঠন।
আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি করেন সংগঠনের নেতারা। পরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। মানববন্ধন ও মিছিলের ব্যানারে লেখা ছিল ‘আর নয় কালক্ষেপণ, দ্রুত চাই প্রজ্ঞাপন’।
দ্রুত কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো একযোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
কেন্দ্রীয়ভাবে এ কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এসে জড়ো হয়। তারপর সেখান থেকে মিছিলযোগে আন্দোলনকারীরা টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমবেত হয়। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে আন্দোলনকারীরা সারিবদ্ধভাবে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের যে ঘোষণা, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার দাবি জানান। প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে কোনো কোনো টালবাহানা হলে ছাত্রসমাজ তা মেনে নেবে না বলেও জানান তাঁরা।
মানববন্ধনে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর ২৭ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এ নিয়ে সারা দেশের ছাত্রসমাজ ক্ষুব্ধ। ছাত্রসমাজ সব সময় আলোচনার পথ খোলা রেখেছিল। সরকারের পক্ষ থেকে ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের যতবার ডাকা হয়েছিল, আমরা গিয়েছি।’
নুরুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বন্ধ করে পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। তাদের আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা না হয়, তবে আগামী রোববার থেকে সারা দেশে ছাত্রসমাজের দাবানল রাজপথ উত্তপ্ত করবে। ছাত্রসমাজ যদি ক্ষেপে যায়, যেকোনো অশুভ শক্তিকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামে সংগঠনটি।
আর গত ৮ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে নামে সরকারি চাকরিতে অনীহা দেখানো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও। আর ১২ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোটার দরকার নেই।’
এরপর ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে গেলেও গত ২৬ এপ্রিল দ্রুত প্রজ্ঞাপন না হলে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা আসে। পরদিন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক আলোচনায় বসেন কোটা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে। জানান, প্রথানমন্ত্রী দেশে ফিরলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হবে।
প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে গত ২ মে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি কোটা বাতিলের বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা পাল্টাবে না।
এ ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের যখনই নির্দেশ দেবেন, সেটা বাস্তবায়িত হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনোভাবে আমরা প্রস্তুত। কমিটি লাগলে করব। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হলে করব, যেকোনো পদ্ধতিতে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অবস্থানটা এখন এ রকম যে কোটা বাতিলের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন অথবা নির্দেশ দিয়েছেন যেকোনো ভাষা আপনারা প্রয়োগ করতে পারেন সেটার চূড়ান্ত রূপ, অর্থাৎ আপনারা যেটা বলেন প্রজ্ঞাপন বা সার্কুলার, সে কাজটা বাকি আছে। এখন সেটা কোন পর্যায়ে আসবে, সেটা আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’