‘ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারছি না’
‘পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। আমার বাম পায়ে তেমন কোন আঘাত পড়েনি। কিন্তু বাম পা নড়াচড়া করলে পুরো শরীর ব্যথা করে। সারাদিন এক অবস্থায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে। ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছি না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের হামলায় আহত তরিকুল ইসলাম তারিকের সঙ্গে আজ শুক্রবার রাতে নগরীর রয়্যাল হাসপাতলে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের এ প্রতিবেদকের। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তরিকুল প্রতিবেদকে এসব কথা বলেন। বর্তমানে তরিকুল ওই হাসপাতলে ৬১৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
তরিকুল বলেন, ‘ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। তাই অনেক পেইন কিলার নিয়েছি। অনেক ব্যথা করায় কালকে আমার পায়ের প্লাস্টার খোলা হয়েছে। প্লাস্টারটা যখন খুলেছে তখন দেখলাম আমার পায়ে কোন কিছু নেই। সোজা পা একদিকে হেলে পড়ে আছে। আমার পায়ের অবস্থা আগের মতোই আছে।’
তরিকুল আরো বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনটা শান্তিপূর্ণভাবে চলছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনটা একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আমরা কখনো কোন ধরণের সহিংসতায় আমরা যাইনি। আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগ আমাদের পক্ষে থাকলেও পরে এসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।’
তরিকুল বলেন, ‘বন্ধু, বড় ভাই ও ছোট ভাইয়েরা টাকা দিচ্ছে। এছাড়া অনেকে সাহায্য করবেন বলেছেন তাদের কাছ থেকেও কিছু সাহায্য পাচ্ছি।’
তরিকুলের ছোট বোন ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘আমরা গরীব পরিবার। আমরা তিন ভাই-বোন। সবাই পড়াশুনা করি। প্রতিদিন এখানে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। আমাদের পক্ষে এতো টাকা ব্যয় করা সম্ভব না। আমার ভাইয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। কোন নড়াচড়া করতে পারছে না।’
হাসপাতলে তরিকুলের সঙ্গে থাকা তাঁর সহপাঠীরা জানান, রয়্যাল হাসপাতালে চিকিৎসক তরিকুলকে দেখার পর কিছু পরীক্ষা দেন। পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই চিকিৎসককে দেখানো হবে। এছাড়া তরিকুলের মেরুদন্ডে প্রচন্ড ব্যথা করছে। যদি মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে যায় তাহলে এটা দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা নিতে হবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
তরিকুলের চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে থাকা চিকিৎসক সাঈদ আহমেদ বাবু বলেন, ‘হাতুড়ি পেটায় তরিকুলের ভেঙ্গে যাওয়া ডান পা জোড়া লাগতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তরিকুলের এক্সরেসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন রিপোর্ট এলে হাসপাতলে কতদিন থাকতে হবে কিংবা অস্ত্রোপচার করা লাগবে কিনা তা জানা যাবে।’
গত ২ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এদের মধ্যে তরিকুলকে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। আঘাতে তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়। এছাড়া মাথায় গুরুতর জখম হয়।
তরিকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার তরিকুলকে ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়। পরে তার সহপাঠীরা তাকে নগরীর রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি করেন।