বিক্ষোভে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকায় আন্দোলনরত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। আজ রোববারের মিছিলে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায়ও বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সেখানেও প্রায় হাজারখানেক শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলে নারী শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা 'নয় দফা এক দাবি, শাজাহান খান কবে যাবি!' ইত্যাদি প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী ক্যাম্পাসের প্রধানসড়কগুলো পদক্ষিণ করার পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যায়। মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। পরে সমস্বরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে সমাবেশটি শেষ হয়। সমাবেশ থেকে আজ সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ডাক দেওয়া হয়।
পূর্ব ঘোষণা অনুসারে শিক্ষার্থীরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
এদিকে, মিছিল চলাকালীন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে জড়ো হয়ে অবস্থান নিলেও কোনো ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পরে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। লিফলেটে সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের সাথে কয়েকজন শিক্ষকও অংশ নেন। মিছিল সম্পর্কে ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, জাহাঙ্গীরনগরে অনেক বড় আন্দোলন হয়েছে। আজকের মিছিলটি স্মরণকালের বড় বিক্ষোভগুলোর একটি। প্রতিবাদ সংগ্রামে জাহাঙ্গীরনগর সবসময়ই অগ্রগামী হয়ে থাকে।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন। নৌমন্ত্রী শাজাহান খানও নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা। টানা অষ্টম দিনের মতো তারা রাস্তায় নিয়েছে। গতকাল রাজধানীর জিগাতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় একদল যুবক।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তার অবস্থান নেওয়ার থেকে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় বাস চলাচল একেবারেই কমে যায়। এমনকি আন্তজেলা বাস চলাচলও বন্ধ করে দেন মালিক ও শ্রমিকরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয়টি দাবি করেছে। তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার উচিত বলে জানান তিনি।
এরই মধ্যে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতারা বলেছেন, নিরাপদ বোধ না করা পর্যন্ত তাঁরা রাস্তায় বাস নামাবেন না। ফলে অঘোষিত ধর্মঘট চলছে।