‘উপহার’ হল রক্ষার দাবিতে স্মারকলিপি
রাজশাহীতে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে হলটি রক্ষা করার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে পাঁচটি সংগঠন।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল, রাজশাহীর চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি তারেক মাহমুদ রাসেল, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান করীর লিটন, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ ও বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি সুলতানুল ইসলাম টিপু।
আজ বুধবার রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদেরের মাধ্যমে এ স্মারকলিপিটি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও চলচ্চিত্রনির্মাতা ড. সাজ্জাদ বকুল, বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি সুলতানুল ইসলাম টিপু ও ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে টিকে থাকা একমাত্র সিনেমা হল উপহার বন্ধ হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে সেখানে বড় পর্দার সিনেমা হল অক্ষত রেখে আধুনিকায়ন করে সেখানে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ যাতে কম খরচে চলচ্চিত্রের বিনোদন উপভোগ করতে পারে সে জন্য উপহার হলের স্থানে সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিবর্তে সনাতনী সিনেমা হলের আদলেই সেখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।’
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, একই দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী সিটি করেপারেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসনে বাদশার কাছেও স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।
এর আগে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ‘উপহার’ সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর থেকেই রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংসদসমূহ, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ, বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটি ও চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির রাজশাহী শাখা হলটি রক্ষায় আন্দোলনে নামে।
এ ছাড়া এসব চলচ্চিত্র সংসদের ব্যানারে গত ৭ অক্টোবর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন ও ৮ অক্টোবর উপহার হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে রাজশাহীর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করে।
এদিকে হলটিকে সংরক্ষণের জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও চলচ্চিত্রনির্মাতা ড. সাজ্জাদ বকুল, বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি সুলতানুল ইসলাম টিপু ও ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন মাসুদ।
তাঁরা বলেন, ‘রাজশাহীতে এখনো রাজশাহীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শতাব্দীপ্রাচীন। বরেন্দ্রের এই উর্বর ভূমিতে জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে কান্তকবি রজনীকান্ত সেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটক, স্যার যদুনাথ সরকার, বহু ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ যশস্বী ব্যক্তির। এখানেই শিকড় ছিল ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, কালজয়ী রাজনীতিবিদ শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের। এ ছাড়া রাজশাহীতে এখনো দৃপ্ত পদচারণা অব্যাহত রেখেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এখানে আগমন ঘটেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, উপমহাদেশের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী ওস্তাদ সালামত আলী খাঁ, ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ প্রমুখের। বর্তমানে বিভাগীয় এই জেলা শহরের সাহিত্য-সংস্কৃতি-ক্রীড়া-রাজনীতির চর্চার সুপ্রাচীন ইতিহাস সারা দেশের মানুষের কাছে সুবিদিত।’
তাঁরা আরো বলেন, ‘রাজশাহীতে সংস্কৃতির চর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এখানকার চলচ্চিত্রচর্চা। সেই আশির দশক থেকেই এখানে চলচ্চিত্রের চর্চা হয়ে আসছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একটা উর্বর ভূমি হিসেবে রাজশাহীর সুনাম রয়েছে। কিন্তু গত প্রায় দেড় দশক ধরে এখানে চলচ্চিত্রচর্চা বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে প্রেক্ষাগৃহের অভাবে। রাজশাহীতে সুস্থ বিনোদনপিয়াসী মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে যেসব সিনেমা হলগুলো ছিল সেগুলির প্রায় সবই নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।’
সাজ্জাদ বকুল, সুলতানুল ইসলাম ও মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘হলটিকে সরকার পিপিপি বা পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপের মাধ্যমে অথবা নতুন মালিকের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করে আধুনিকায়ন করা হোক। মধ্যবিত্ত শ্রেণির যে দর্শকরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সিনেমা হলের পরিবেশ না থাকার কারণে, তাদের আবার হলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে, হলটিকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলে এখানে সিনেমা হলের পাশাপাশি রাজশাহীর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য কার্যালয়ের ব্যবস্থা করা ও এখানে নাটকের প্রদর্শনীর জন্য আধুনিক মিলনায়তন তৈরি করে এটিকে একটি ‘কালচারাল কমপ্লেক্স’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’