ঢাবি ছাত্রীকে নির্যাতন, গ্রেপ্তার হয়নি খাদ্য পরিদর্শক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অপহরণ চেষ্টা ও নির্যাতনের ঘটনায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তফিউজ্জামান জুয়েলকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
এতে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
মানববন্ধনে ‘ভুক্তভোগী’ ছাত্রীর বড় ভাই ঢাবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাসুদ আল ইসলাম বলেন, গত বুধবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার দোয়ানী তিস্তা ব্যারেজের কাছে পিস্তল দেখিয়ে অপহরণের উদ্দেশ্যে তাঁর বোনের মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলেন জুয়েলসহ অন্যরা। পরে ওর গলায় পা তুলে, উপর্যুপরি লাথি, কিল ঘুষি মেরে টানাহ্যাঁচড়া করলে ওর বন্ধু-বান্ধবীরা বাঁচাতে এলে তাঁরাও লাঞ্ছিত হয়। চিৎকার করে পালিয়ে আসার একপর্যায়ে পথচারীরা তাঁর বোনকে উদ্ধার করে।
ছাত্রীর বড়ভাই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক মাসুদ আল ইসলাম বলেন, ‘গত ২ জানুয়ারি আমার বোনকে অপহরণের চেষ্টার পর আমরা মামলা করতে গেলে পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করেনি। তারা মামলা নিতে গড়িমসি করে এবং এই সময়ের মধ্যে মামলার মূল আসামি তফিউজ্জামান জুয়েলসহ অন্যরা গা ঢাকা দেয়। পরে গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার বিষয়টি অবহিত হলে মামলা নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং কয়েকবার পুলিশী অভিযান চালান। কিন্তু দুই দিনের সময়ক্ষেপণের কারণে আসামিরা গা ঢাকা দেয়। পরে এজাহারভুক্ত পাঁচ নম্বর আসামি আমার বোন যে গাড়িতে ছিল সেই ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পাই আসামিরা ঢাকাতেই বিভিন্ন জায়গায় আছে কিন্তু তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো গতিবিধি লক্ষ্য করছি না।’
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২ জানুয়ারি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হাতীবান্ধা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তফিউজ্জামান জুয়েলসহ সাত-আটজন যুবক ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে নির্যাতন ও অপহরণের চেষ্টা করে।
মামলা নিতে গড়িমসির বিষয়ে জানতে চাইলে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মতিন প্রধান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি, ৩ তারিখ বৃহস্পতিবার এজাহার পেয়ে পরের দিন মামলা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আসামি জহুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে।’
ওসি বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি তফিউজ্জামান জুয়েল ডিমলা উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জেনেছি। তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জুয়েলসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মানববন্ধনে ওই ছাত্রীর সহপাঠী মো. গোলাম আজাদ বলেন, ‘সে আমাদের বিভাগের প্রথম স্থান অর্জনকারী ছাত্রী। তাঁর মতো একজন মেধাবী ছাত্রীর নিরাপত্তা যদি রাষ্ট্রও দিতে না পারে তখন আমরা বাধ্য হই রাস্তায় নেমে আসতে। আইন যদি আমাদের সহযোগিতা না করে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। যতদিন পর্যন্ত না আমরা এর বিচার পাব, ততোদিন পর্যন্ত সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ বন্ধ করবে না। প্রয়োজনে আমরা সমাজকল্যাণ বিভাগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে একতাবদ্ধ করব।’
আরেক সহপাঠী মিথা খাতুন বলেন, ‘আমরা চাই যেটা হয়েছে এ ধরনের ঘটনা যেন অন্য কারো সঙ্গে না হয়। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে অহরহ ঘটেই চলেছে। এমন কোনো দিন নেই যে খুন, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার খবর আমরা শুনতে পাই না। আমরা চাই, অপরাধ ছোট বা বড় যে ধরনেরই হোক, এই অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’
নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘অপহরণের যে চেষ্টা করা হয়েছে সেটা কিন্তু ধর্ষণের চেষ্টা। এভাবেই কিন্তু ধর্ষণ হয়। আমরা ধর্ষণের প্রতিবাদ করি কিন্তু ধর্ষণ করার যে প্রক্রিয়া চালানো হয় তার প্রতিবাদ করি না। আমরা কেমন মানুষ? কিভাবে দুষ্কৃতিকারীরা আমাদের মধ্যে টিকে থাকে? কিভাবে তারা অন্যায় করে পার পেয়ে যায়?’