প্রার্থিতা প্রত্যাহারে চাপ দিচ্ছে ছাত্রলীগ!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে ছাত্রলীগ চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানিয়েছেন, কোনো প্যানেল কিংবা প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল আজ শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত। ছাত্রদল ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থীদের অভিযোগ, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়া হচ্ছে অনেককে। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও আনা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের যারা হলের প্রার্থী, কৌশলগত কারণে আমরা যাদেরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছিলাম, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হেনস্থা করা হচ্ছে। তাদের দুই-একজনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করিয়েছে।’ এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার বলেন, ‘পোস্টার সাঁটানোর নিয়ম নেই। তবু পোস্টার লাগানো হচ্ছে। এসব আইনের লঙ্ঘনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে বলে আমার মনে হয় না।’
আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান আনিসুর।
পোস্টার লাগানো নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। উনাকে অর্থাৎ ছাত্রলীগ সমর্থিত যে সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ রয়েছে সেই প্যানেলকে বিতর্কিত করার জন্য কোনো একটি কুচক্রী মহল এই কাজ করে থাকতে পারে বলে উনি আমাকে জানিয়েছেন।
অনেকেই আছেন যে ছাত্রলীগে একটি পোস্ট পেলে তাঁরা ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না, তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা কাউকে জোর করিনি। আমাদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রা এতই নিম্ন নয় যে কাউকে জোর করে বসিয়ে দিতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগ পর্যন্ত কেউ যেমন প্রার্থী না, তেমনি আচরণবিধি অনুযায়ী তারা এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও চালাতে পারে না।
প্রক্টর বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি হচ্ছে সহযোগিতা। সেই সহযোগিতার অবস্থা থেকে কাউকে সরানোর চেষ্টা করলে অবশ্যই সেখানে শাস্তি ও অন্যান্য পন্থা চলে আসবে। তবে আমাদের কাছে লিখিত প্রমাণসহ অভিযোগ আসলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রার্থীই তাদের মনোনয়ন ফিরে পেয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান সাজিদ। পুরোনো ছবি
স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন
বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল সংসদের এক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মারধরসহ রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তাঁকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা আটকে রেখে আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই প্রার্থী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হল প্রশাসনকে মৌখিক অভিযোগ দেন। বিষয়টি স্বীকার করেছে ছাত্রলীগ।
ভুক্তভোগী ওই প্রার্থীর নাম মাহবুবুর রহমান সাজিদ। তিনি এস এম হল ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মোস্তফা সরকার মিসাদ।
ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মাহবুব যখন হল সংসদ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তখন থেকেই ছাত্রলীগের একটি পক্ষ তাঁকে সরানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। কিন্তু মাহবুব প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে ধরে নিয়ে তাঁকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত আটকে রেখে বিভিন্ন সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয়। সকালে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে একটি চিঠি লিখতেও বাধ্য করে তাঁকে।
জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান সাজিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগ প্যানেলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক মোস্তফা সরকার মিসাদ, মুজাহিদ, আরিফ, অনিকসহ পাঁচ থেকে সাতজন তাঁকে বইমেলা থেকে ধরে আনে। পরে হলের ১১১ নম্বর কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে প্রথম দফায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এরপর গভীর রাত হলে যখন তাঁকে পুনরায় নির্যাতন করা হয় তখন তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন বলে জানান। এরপর সকাল ১০টার দিকে তাঁকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার সম্পর্কে একটি দরখাস্ত লিখে হল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাহবুবুর আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে যখন তিনি হলের প্রাধ্যক্ষকে বিষয়টি জানান তখন হল প্রাধ্যক্ষ তাঁর প্রত্যাহারপত্রটি ছিঁড়ে ফেলেন। পরে তাঁর ওপর নির্যাতনের বিষয়টি সম্পর্কে একটি অভিযোগ লিখতে বলেন। তিনি আগামীকাল সকালে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানান।
মাহবুবুর বলেন, হল প্রশাসন তাঁর নিরাপত্তার জন্য এস এম হলের ছাত্রলীগ মনোনীত জিএস (সাধারণ সম্পাদক) প্রার্থী জুলিয়াস সিজারকে দায়িত্ব দিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জিএস প্রার্থী জুলিয়াস সিজার তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও আজ সকালে তাঁর (মাহবুবুর রহমান সিজার) নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার ওপর দেওয়া হয়েছে। আমি তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছি। আগামী নির্বাচনের (১১ মার্চ) মধ্যে যদি এ ধরনের কোনো নির্যাতন করা হয় তবে আমি তাঁর হয়ে কাজ করব। এ ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেন সিজার।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে জুলিয়াস সিজার বলেন, ‘আমি এক গ্রুপ (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী) করি। মিসাদ আরেক গ্রুপ (ঢাবি শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস) করে। সুতরাং আমি চাইলেও কিছু করতে পারব না। কেননা সে আমার কথা শুনে না। সে একভাবে নির্বাচন করবে, আমি আরেকভাবে নির্বাচন করব। শুধু এক প্যানেলে আছি এতটুকুই।’
তবে এস এম হলের ১১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা ও হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফ আল হাসান বলেন, ‘একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভোটের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সংগঠন ও আমাকে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে। গতকাল রাতে আমার রুমে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।