নুরের প্রতি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান, থামালেন শোভন!
মঙ্গলবার বিকেল ৪টার আগে থেকে ছাত্রলীগ মনোনীত ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনসহ নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে। শোভনসহ নেতাকর্মীরা কয়েক মিনিটের একটি ঝটিকা মিটিং সেরে রওনা দেন টিএসসির দিকে।
সামনে পেছনে বিশাল শোডাউন, সঙ্গে স্লোগান। গন্তব্য সোজা টিএসসি। টিএসসির মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন সদ্য নির্বাচিত হওয়া ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর।
এর আগে দুপুরে টিএসসিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেল থেকে সদ্য নির্বাচিত ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নুর ধাওয়া খেয়ে টিএসসির ভেতরে ঢুকে যান। ওই ঘটনার পর থেকে নুরসহ কোটা আন্দোলনকারী অনেক প্রার্থীই প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনী বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলছিলেন। মিলনায়তনেই ছিলেন সবাই। নুরের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ না করেই ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী সেখানে হাজির হন বলে জানান সেখানে থাকা নেতারা। একই কথা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনেরও।
শোভনের শোডাউনে ছিলেন অনেক নেতাকর্মী। প্রচুর ধাক্কাধাক্কির মধ্যে দিয়ে মিলনায়তনে ঢুকতে হয় সাংবাদিকদের। মিলনায়তনের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে মূল মঞ্চের! কী এক নান্দনিক আবহ। যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুপুরে ধাওয়া দিলেন সেই ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থীই এসেছেন নির্বাচিত ভিপিকে সমর্থন দিতে। সংবাদ মাধ্যমের সামনেই নুরের সঙ্গে হাত মেলান শোভন। টেনে নেন বুকে। দুজন কোলাকুলি করেন। ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় নুরকে শুভেচ্ছা জানান শোভন। নুরও তাঁকে ধন্যবাদ জানান। নুরকে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেন শোভন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হাত তালি দেন।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে টিএসসির মিলনায়তনে এই ঘটনা দেখা যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা একই লাইনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। একে অপরের প্রতি হাত বাড়ানোর পরিবেশ নিয়ে কথা বলেন।
শোভন নুরুল হক নুরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানোর পর দুজনে কথা বলেন সংবাদ মাধ্যমে। প্রথমেই শোভন, এরপর নুর কথা বলেন।
দুপুরে দুটি পদ বাদ দিয়ে সব পদের পুনরায় নির্বাচনের যে দাবি জানিয়েছেন এখন কী সেই দাবি থেকে সরে এসেছেন? আর দুপুরে আপনার ওপর হামলা করার পর আগামীকালের জন্য যে কর্মসূচি ঘোষণা করলেন সেই কর্মসূচি পালন করবেন কি না- সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করেন নুরুল হক নুরকে। প্রশ্ন শুনে জবাব দেওয়ার আগেই নুরকে কিছুটা বিব্রত দেখা যায়। ঠিক সে সময়ই সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগের কর্মীরা নুরের প্রতি হাত তালি দিয়ে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেওয়া শুরু করে। হৈ হুল্লোড় পড়ে যায় চারিদিকে। সবাই হেসে ওঠেন। এর পরই নুরকে থামিয়ে শোভন সবাইকে চুপ থাকতে নির্দেশ দেন। তখন ভুয়া স্লোগান দেওয়া ছাত্রলীগের কর্মীরা চুপ হয়ে যায়।
তখন শোভন বলেন, ‘আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর পর যে ডাকসু নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনে আমাদের নুরুল হক, সে আমার ছোট ভাই, ছোট ভাইয়ের বন্ধু, তো সে দীর্ঘদিন পর একটি ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করল। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটে কিন্তু সে বিজয়ী হয়েছে। তো আপনাদের এই রায়টা প্রত্যেককে মেনে নিতে হবে। প্রত্যেককে মেনে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে আমরা সকল শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পাশাপাশি থেকে চলাফেরা করি। আমরা সকলে ভাই ভাই। সেই ভাই ভাইয়ের জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সেজন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানাব। এই ফলটি মেনে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সাথে আমি নুরুল হককে ভিপি নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই।’
এরপর আবারও নুর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয়, বাংলাদেশ ও এই জাতির বাতিঘর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটি উন্নতমানের শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলব। সে লক্ষ্যে আমাদের পরস্পরের সহযোগিতা প্রয়োজন। যেহেতু শোভন ভাই ব্যক্ত করেছেন, তিনি সকল সহযোগিতা করবেন। আমরাও সেটা প্রত্যাশা করি, যখন যেটা প্রয়োজন হবে কোনো ছাত্রদের প্রয়োজনে সেই সহযোগিতাটা শোভন ভাইয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি।’