ডাকসুর ২৮ বছরের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা করার দাবি
দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) অচল থাকলেও তার নির্ধারিত ফি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসব টাকার আয় ও ব্যয়ের জন্য নিরীক্ষা দাবি করেছেন ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
আজ রোববার দুপুরে আয়োজিত ডাকসুর প্রথম বাজেট সভায় তাঁরা এ দাবি জানান। একাধিক প্রতিনিধি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সভায় ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসাইন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সংস্কৃতি সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ ডাকসুর ২৫ জন প্রতিনিধি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
জানা যায়, প্রতি বছর ঢাবি শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ ফি দেন ১২০ টাকা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। সেই হিসাবে এক বছর তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৪৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২৮ বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা। এই টাকার আয় ও ব্যয়ের জন্য নিরীক্ষা দাবি করা হয়েছে।
সভা শেষে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ২৮ বছর ধরে ডাকসু অচল থাকলেও এত দিন ধরে শিক্ষার্থীরা ডাকসু ও হল সংসদের ফি দিয়ে আসছে। কিন্তু ডাকসু অকার্যকর থাকায় এসব টাকার বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তাই এই টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা অডিট করার দাবি জানিয়েছি।
জানতে চাইলে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ডাকসুর সম্পাদকদের কার কী কাজ তা সবাই জানেন না। আমরা শুরুতেই এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। এ ছাড়া, আমরা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সোর্স থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা লেখালেখি করে তারা যেন বই লিখতে আগ্রহী হয় সেজন্য তাদের একটা ফান্ড দরকার। আমরা যাতে তাদের সহযোগিতা করতে পারি সে বিষয়টি নিয়েও কথা বলেছি। এ ছাড়া, ডাকসুর সংগ্রহশালা কমিটি করে তার স্মৃতি সংরক্ষণ, ক্যাম্পাসে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ এবং ছিনতাই প্রতিরোধে প্রশাসনের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ঢাবিতে প্রথম স্বাস্থ্যবিমা চালু হয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে। এটি সব শিক্ষার্থীর মধ্যে চালু করা হোক। তিনি একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ফ্রি ওয়াইফাই আওতায় আনার দাবি জানান। সভায় বাইক সার্ভিস এবং বিভিন্ন মাঠের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করারও দাবি জানান তিনি।
ডাকসুর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সংরক্ষণ করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানান। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করারও প্রস্তাব দেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভায় প্রদর্শন করা যেতে পারে। বিষয়টি তিনি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন।
ডাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতিবাচক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলে অসাম্প্রদায়িক ঢাবি বিনির্মাণ ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন গড়ার লক্ষে ডাকসুর পক্ষ থেকে এক কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আগামী বৈঠকে তা অনুমোদনের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ডাকসুর সভাপতি ও ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা ডাকসুর সদস্যদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান করব। এতে ডাকসুর সব প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাবে। এ ছাড়া বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক সম্পাদক তাঁর বরাদ্দকৃত টাকা নিজ নিজ খাতে ব্যয় করবেন।