ছাত্রলীগের দুপক্ষের উত্তেজনায় রাজশাহী আইএইচটি বন্ধ
কঙ্কাল বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি—আইএইচটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি বছরের ডিপ্লোমা কোর্স জানুয়ারির অবশিষ্ট মৌখিক পরীক্ষা এবং বিএসসিসহ ডিপ্লোমা কোর্সের সব বর্ষের ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে আবাসিক সব শিক্ষার্থী ছাত্রাবাস ছেড়ে গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামানের অনুসারী তৃতীয় বর্ষের তিন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের দুই নম্বর গ্যালারিতে কঙ্কাল বিক্রির জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যায়। সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি আসলাম সরকারের অনুসারী প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে সম্পাদকের অনুসারী তিন শিক্ষার্থীর কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে সম্পাদক পক্ষের পাঁচজন এবং সভাপতির পক্ষের একজনসহ ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সময় সভাপতির পক্ষের অনুসারী ছাত্রাবাসে সম্পাদক পক্ষের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করা হয় অভিযোগ করা হয়েছে।
আহতরা হলেন সম্পাদক পক্ষের ছাত্রলীগ কর্মী ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম, ডেন্টাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমাউল হোসেন, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি সরকার, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমীন এবং ফিজিওথেরাপি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যোতি সিদ্দিক।
এর মধ্যে নাফিউল ইসলাম ও আসমাউল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আসমাউলের মাথায় ২৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সভাপতি পক্ষে আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা।
মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে নগরীর রাজপাড়া থানায় সভাপতিসহ আটজনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলামের মা শরীফা বানু বাদী হয়ে একই ঘটনায় অপর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আইএইচটির একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে নোটিশ জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘আইএইচটির একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুরুতর আহত অবস্থায় ১১ শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে অবস্থা আরো অবনতি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সেইসঙ্গে ডিপ্লোমা কোর্স জানুয়ারি-২০১৯-এর অবশিষ্ট মৌখিক পরীক্ষাসমূহ এবং বিএসসিসহ ডিপ্লোমা কোর্সের সব বর্ষের ক্লাসসমূহ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ৮টার মধ্যে ছাত্ররা এবং আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীরা আবাসিক হল ছেড়ে গেছেন।
ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান জানান, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পরে শুনেছেন, সভাপতির সমর্থকরা তাঁর উপস্থিতিতেই শামীম ছাত্রাবাসে ঢুকে তাঁর (সাধারণ সম্পাদকের) নিজের এবং সমর্থকদের তিনটি কক্ষ ও মসজিদের জানালার কাচ ভাঙচুর করেছে। সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, ‘সভাপতির অনুসারীরা তাঁর কক্ষের টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকা ও ৩১০ নম্বর কক্ষ থেকে ল্যাপটপ লুট করে নিয়ে গেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।’
তবে আইএইচটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আসলাম সরকার বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের কর্মী সমর্থকই আহত হয়েছেন। তবে যাদের কক্ষ ভাঙচুর করার অভিযোগ করা হচ্ছে, তারা নিজেরাই তাদের কক্ষ ভাঙচুর করে সাংবাদিকদের খবর দিয়েছে।’
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার পর পুলিশ গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে লাঠি ও বিভিন্ন দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। তবে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর একইভাবে আইএইচটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় ছাত্রলীগের তখনকার কমিটি বাতিল করা হয়েছিল এবং ছাত্রলীগের চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।