ছাত্ররা থাকেন গণরুমে, ডাকসুর জিএসের কক্ষে এসি
গণরুম ব্যবস্থা বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডাকসুর নেতৃত্বে এসেছিল ছাত্রলীগ। মেয়াদের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেননি তারা। বরং শিক্ষার্থীরা গণরুমেই থাকছে। আর তাদেরই প্রতিনিধি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী থাকেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কক্ষে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া ইশতেহারে ফুলঝুরি ছড়িয়েছিল। তারা ঢাবিকে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনাসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীদের সহনাভূতি পেয়ে ভোটে জিতেছিল। কিন্তু সেই তারা এখন সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। বরং নিজেরা কীভাবে আরাম-আয়েশে থাকবে সেই চিন্তা নিয়েই তারা ব্যস্ত, যেভাবে জিএস গোলাম রাব্বানী তাঁর কক্ষে এসি স্থাপন করেছেন।
জানা যায়, গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ডাকসুর জিএসের রুমে এসি স্থাপন করা হয়। যদিও ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সহসাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) অন্য রুমগুলোতে কোনো এসি স্থাপন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ডাকসুর কোষাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, কারো ব্যক্তিগত রুমে এসি স্থাপন করার বিষয়ে কিছু জানি না। তবে, ডাকসুর সম্মেলন কক্ষে একটি এসি স্থাপনের কথা বলা হয়েছিল।
জিএস গোলাম রাব্বানীর এমন বিলাসিতার সমালোচনা করেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য। তাঁরা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁরা ছাত্রদের প্রতিনিধি। তাঁরা ছাত্রদের সমস্যাগুলো সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই ডাকসুতে এসেছেন। শিক্ষার্থীরা যদি গণরুমে থাকে, তাহলে তাঁরা কীভাবে এসি রুমে থাকতে পারেন? এটা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা গণরুম বিলুপ্ত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ডাকসুতে এসেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনো গণরুমে থাকছেন। অনেকেই সেখানেও জায়গা না পেয়ে বারান্দায় থাকে। আর আমরা তাদের ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে রুমে এসি স্থাপন করব, এটা আমি সমর্থন করি না। যেখানে ডাকসুর অন্যান্য রুমেও এসি লাগানো নেই।’
গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে গোলাম রাব্বানীর রুমে এসি স্থাপন করা হয়েছে বলে ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে গোলাম রাব্বানীর রুমে এসি স্থাপন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী তাঁর নিজস্ব রুমে একটি এসি স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাকসুতে এসি স্থাপনের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়নি। তিনি বলেন, যেহেতু ডাকসুতে এসি স্থাপন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিয়ম নেই, তাই সেটি সম্ভব না।
ডাকসুর সদস্য মাহমুদুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে জানান, এই এসি আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে স্থাপন করা হয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৪৭ হাজার টাকা। ভাইয়ের (রাব্বানী) এক পরিচিতজন, এটি উপহার দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই ছাত্রলীগ নেতাদের ত্যাগী হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ তিনি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠে আসে। এসব অভিযোগগুলোর মধ্যে- আরাম-আয়েশে দিন কাটানো, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, কয়েকটি কমিটি দিতে অনৈতিক অর্থ লেনদেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিতদের পদায়ন ইত্যাদি।
রাব্বানীর কর্মকাণ্ডে সমালোচনা তৈরি হয়েছে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের মধ্যেও। সংগঠনটির সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাদের বারবার ত্যাগী হওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু আমাদের সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বরাবরই আরামপ্রিয়।’
রাকিব হোসেন আরো বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে তিনি (গোলাম রাব্বানী) ডাকসুতে এসি ব্যবহার করতে পারেন না। আরাম-আয়েশ করার জন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে নির্বাচিত করেননি। এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করা উচিত।’
এসি স্থাপনের বিষয়ে গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি উত্তর দেননি।