‘ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরব না’
গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত পাঁচ দিনের ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আজ মঙ্গলবার অবস্থান নিয়ে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেইসঙ্গে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আমরণ অনশন মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ভিসির পদত্যাগের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবেন না।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতরা হামলা চালায়। এতে সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
এ ঘটনায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা হলত্যাগ না করে উপাচার্য পতন আন্দোলন আরো জোরদার করেন। এ আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পদত্যাগ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে আন্দোলনে নতুন মোড় নিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনারও বিচার দাবি করছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় উপাচার্য জড়িত—মো. হুমায়ুন কবীরের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রক্টরিয়াল টিম।
সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’—এ বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে অশোভন ভাষায় কথা বলেন উপাচার্য। তাঁদের কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়।
সেখানে উপাচার্যকে বলতে শোনা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? ফাজিল কোথাকার! বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তুমি জান না? বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ তোমাদের মতো বেয়াদব তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তোর আব্বার কাছে শুনিস। গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিন?’
উপাচার্য বলছিলেন, ‘আমি খুলছি বলেই তো তোর চান্স হইছে। না হলে তো তুই রাস্তা দিয়া ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলেমেয়ে।’
অডিও ফাঁসের পর জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। এরপর নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জিনিয়া।
দুদিন বাদেই কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর রাতেই ভিসিবিরোধী আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারপর গভীর রাতে একটি অফিস আদেশ আসে, যেখানে ১৪ দফা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই অফিস আদেশ আমলে না নিয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে আবার ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে।