বশেমুরবিপ্রবির প্রক্টরের পদত্যাগ
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া পদত্যাগ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রক্টর আশিকুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলনের সময়ে সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবির, ড. মো. নাজমুল হক ও ড. মো. তরিকুল ইসলাম পদত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. নূরউদ্দিন আহমেদ প্রক্টর আশিকুজ্জামানের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়ার পদত্যাগপত্রটি আমি পেয়েছি। এটি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরবর্তী সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সমালোচনার মুখে ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, কথায় কথায় বহিষ্কার, স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সার্বিক অবস্থা বেগতিক দেখে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর উপাচার্য সমর্থনকারী বহিরাগতরা হামলা করে। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলন আরো জোরদার করে। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সহকারী প্রক্টর ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. হুমায়ুন কবির পদত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গোপালগঞ্জে এসে ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তদন্ত সম্পন্ন করে। এ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর সহকারী প্রক্টর ড. মো. নাজমুল হক ও সহকারী প্রক্টর ড. মো. তরিকুল ইসলাম পদত্যাগ করেন।
এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি উপাচার্যকে অপসারণের সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। সেদিন রাতেই পুলিশ পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন এবং পরের দিন তিনি পদত্যাগ করেন। উপাচার্য পদত্যাগ করায় শিক্ষার্থীরা ১ অক্টোবর আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে।
১৮ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার একদিন পরই ১০ অক্টোবর প্রক্টর মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া পদত্যাগ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলে, প্রক্টর আশিকুজ্জামান সাবেক উপাচার্যপন্থী ছিলেন। তিনি উপাচার্যের দুর্নীতি, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন। এসব কারণেই তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা ধারণা করছে।
এ বিষয়ে প্রক্টর ও ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ। এই অবস্থায় প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’