ওম পুরি
‘যে মানুষটা আমার একান্ত ঘরের’
‘তাঁর চোখের দিকে তাকালেই আপনি এক গভীর ধ্বনি শুনতে পাবেন… একজন অভিনেতা হিসেবে এমনটাই শক্তিধর তিনি।’
ওম পুরিকে নিয়ে এই কথা বলেছিলেন বিখ্যাত প্রয়াত হলিউড অভিনেতা প্যাট্রিক সোয়েজ। ১৯৯২ সালে রোঁলো জফের ফ্রেঞ্চ-ব্রিটিশ ড্রামা ‘সিটি অব জয়’-এ এই দুই তারকাই ছিলেন সহঅভিনেতা, সঙ্গে ছিলেন শাবানা আজমি। ওমের প্রতি প্যাট্রিকের এই মন্তব্য স্থান পেয়েছিল ওম পুরির জীবনীগ্রন্থ ‘আনলাইকলি হিরো’র প্রচ্ছদে। প্রকাশের আগেই বিতর্কের ঝড় তুলেছিল বইটি।
বইটি লিখেছিলেন ওম পুরির স্ত্রী নন্দিতা পুরি, আর বইয়ে বর্ষীয়ান তারকার জীবনের অতীত সম্পর্কগুলোরও বিস্তারিত বিবরণ ছিল। ওম পুরি আজ সব হিসাবনিকাশের ঊর্ধ্বে চলে গেছেন। একটা সময় জনসমক্ষে ওম পুরি তাঁর স্ত্রীকে এহেন বিতর্ক সৃষ্টির জন্য দোষারোপ করেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি স্ত্রীর কাছে এবং পুত্র ঈশানের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।
রেডিফ ইন্ডিয়ার কাছে, ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে এক সাক্ষাৎকারে এই জীবনীগ্রন্থ নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন নন্দিতা। সেই সাক্ষাৎকারের ভাষান্তরটিই পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে।
এটা কি সত্য যে ওম চেয়েছিলেন তাঁর জীবনীগ্রন্থ অন্য কেউ লিখুক, কিন্তু আপনি নিজ থেকেই এটা লিখতে চেয়েছিলেন? আপনার কি মনে হয়েছিল যে এমন একটা ভার আপনি বইতে পারবেন?
নন্দিতা পুরি : না, এটা সত্য না। ওর (ওম পুরি) সঙ্গে আমার যখন প্রথম দেখা হয়, সে ১৯৯৩ সালের কথা। তখনই আমার এই বইটা লেখার কথা হয়েছিল। ‘সিটি অব জয়’-এর কাজ যখন চলছে, তখনই আমি ওর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলাম। আমাদের তো তখন বিয়ে হয়নি। তখন কাজটা করাও হয়নি। ২০০২ সালে আমি রলি বুকসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই যে আমি ওম পুরির আত্মজীবনী লিখতে যাচ্ছি।
এটা আমার স্বামীর জীবনীগ্রন্থ, মোটেও নন্দিতার সংস্করণে বা ছাঁচে ফেলার ওম পুরি নয়! কাজেই এখানে সব কিছুই ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে হয়েছে। আমি ওর সবকিছু খুব সময় নিয়ে, ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিয়েছি। আমি আমার নিজের ছোটগল্পের বইটা, নাম ছিল ‘নাইন অন নাইন’; ২০০৫ সালে প্রকাশ করি। এর পর আমার নিজের উপন্যাস লেখা শুরু করি। তখন থেকেই ওম আমার ব্যাপারে একটু আপসেট হয়ে পড়ে, এটা ভেবে যে—ওর বইটা অন্য কাউকে দিয়ে লেখালেই বুঝি ভালো হতো।
আমার এক বন্ধু, ডক্টর শোজেব হায়দার, সে আমাকে গবেষণায় সাহায্য করেছিল। ও আমাকে বলেছিল যে অন্য কেউ যদি ওমের আত্মজীবনীটা লেখে তাহলে ব্যাপারটা ভারি লজ্জার হবে, কারণ আমার কাছে তো আসল সবকিছুই জানা রয়েছে। শোজেব বলত যে আমি নাকি ভীষণ আলসে! এই ব্যাপারটা আমাকে খুব তাড়না দিয়েছিল। এরপর, আমি দেড় বছর সময় নিয়ে পুরো বইটা শেষ করে ফেলি।
ওম পুরির জীবনের কোন বিষয়টা আপনাকে আগ্রহী করে তুলেছিল?
নন্দিতা পুরি : গল্পের তো রকম সকম রয়েছেই। তবে সব গল্পই আলাদা, সব ঘটনাই ভিন্ন থেকে ভিন্নতর। ওমের গল্পটা আর দশজনের থেকে অনেকটাই আলাদা, কারণ ও আসলেই অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছিল। প্যারালাল সিনেমার মূলমঞ্চে ও ছিল শাবানা আজমি, স্মিতা পাতিল আর নাসিরুদ্দিন শাহ্র সঙ্গী। এ মানুষগুলোকে নিয়ে তো কেউ সেভাবে লিখতে পারেনি। স্রেফ স্মিতা পাতিলকে নিয়ে মারাঠি ভাষায় বায়োগ্রাফি রয়েছে। আর এ জন্যই আমি এই পুরোটা যাত্রা নিয়ে লিখতে চেয়েছি, ও কীভাবে এই অর্জনগুলো নিজের করে নিয়েছে, তা তুলে ধরতে চেয়েছি। এই গল্প মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে, অনুপ্রাণিত করবে।
আত্মজীবনী লেখক হিসেবে আপনি কি অন্যদের চেয়ে ভালো করবেন বলে মনে করেন?
নন্দিতা পুরি : হ্যাঁ এবং একই সঙ্গে না। আমি ভেবেছি যে আমি এই কাজটায় ভারতের অন্য কারো চেয়ে ভালো করব কারণ আমি ২০টা বছর ধরে লিখছি, আর আমি প্রশিক্ষণ পাওয়া মানুষ। আর হ্যাঁ, আমি তো পুরো বিষয়টা নিয়ে জানিও খুব ভালো।
ডেরেক ম্যালকম (প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র সমালোচক) এই আত্মজীবনীর সূচনাটা লিখেছেন। তখন থেকেই, আপনি চাইলেই দেখতে পাবেন যে সিনেমা নিয়ে ডেরেকের জ্ঞান আর ধারণা কতটা গভীর আর বিস্তৃত। আমি তো আর অমনটা কখনোই লিখতে পারব না!
ডেরেকের মতো সিনিয়র কোনো ফিল্ম রাইটার যদি এটা লিখত, সে হয়তো এটা আরো ভালো লিখতে পারত। কারণ ওই যে, সিনেমা নিয়ে তাদের সুগভীর জ্ঞান! তবে হ্যাঁ, তারা মানুষ ওম পুরিকে ধারণ করতে পারত না, যে মানুষটা আমার একান্ত ঘরের।