এখনো অনেক ভালো কিছু ঘটছে আমার সঙ্গে : শাহরুখ খান
শাহরুখ খান। ডন, বাদশাহ, কিং অব বলিউড, কিং অব রোমান্স—যে নামেই ডাকুন না কেন, শাহরুখ খান সবকিছুর সঙ্গেই মানিয়ে যান। সেই ১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ দিয়ে শুরু। এর পর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘বাজিগর’, ‘দেবদাস’, ‘বীরজারা’ থেকে শুরু করে হালের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘রইস’-এর মতো সুপারহিট ছবি উপহার দিয়ে চলেছেন ভক্তদের। আর এরই মাঝে পেরিয়ে গেছে ২৫টি বছর। সম্প্রতি শাহরুখ তাঁর ২৫ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন ডিএনএ ইন্ডিয়ার কাছে। সাক্ষাৎকারের পুরোটাই এখানে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন : অভিনয় জীবনের ২৫ বছর পেরিয়ে গেল। ফলাফল কী দাঁড়াল?
শাহরুখ খান : আমার জন্য একটা জিনিস দাঁড়িয়েছে যে এই ২৫-২৬ বছর খুব দ্রুত চলে গেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি দুই-তিন বছর ধরে মুম্বাইতে বসবাস শুরু করেছি। আমার কাছে ২৫ বছর চলে গেছে মনে হচ্ছে না। আমার মনে হচ্ছে সময় থেমে আছে। যখন আপনি দেখবেন আপনার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে, এটা আপনাকে বড় ধাক্কা দেবে। কিন্তু আমার মনে হয়, আমি সেখানে খুব অল্প সময়ের জন্য ছিলাম। যখন সবাই আমাকে বলে আমি একই জিনিস বারবার করে যাচ্ছি, তখন নিজের কাছে উদ্ভট লাগে। আমি তো নতুন অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করছি, তাই আমিও তরুণ। টুইটারে আমার কিছু ভক্ত ২৫ বছর ধরে আমি যতগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি, তার সবগুলোর পোস্টার শেয়ার দিয়েছে। আমি নিজেও জানি না কতগুলো ছবি আমি করেছি। এত সময় পেরিয়ে গেছে ভাবতেই অদ্ভুত লাগে। খুব দ্রুত। আমার মনে হয় এই তো সেদিন সবকিছু ঘটেছে।
প্রশ্ন : আপনি কি শেষমেশ আপনার প্রথম ছবি ‘দিওয়ানা’ দেখতে পেরেছেন?
শাহরুখ : আমি এখনো ছবিটি দেখতে পারিনি। এটা আমার অহংবোধের জন্য নয়। কিন্তু আমি আমার নতুন ছবিগুলো দেখি (হাসি)। দিওয়ানা ছবির পর আমি যখন মেহবুব স্টুডিওতে ‘কিং আংকেল’ ছবির কাজ করছিলাম। তখন রাকেশজি (রাকেশ রোশন) আমাকে বলেছিল, ‘তুমি খুব বড় তারকা হবে।’ আমি সালমানের বাড়ির পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম, তখন সেলিম চাচা আমায় বলেছিলেন, ‘তোমার ছবি ভালো চলছে। তুমি খুব বড় তারকা হবে। আমি বাসায় ফিরে এসে গৌরিকে জানালাম যে আমার ছবিটি দারুণ ব্যবসা করছে। সে শুধু বলল, ‘ভালো তো।’ আর এখন তো ছবি মুক্তির আগেই বক্স-অফিসের হিসাব শুরু হয়ে যায়।
প্রশ্ন : শুনেছি আপনি সমালোচনাকে গভীরভাবে নেন না।
শাহরুখ : আমি প্রশংসাকেও গভীরভাবে নিই না। যখন লোকেরা বলে আমি দারুণ, তখনো আমি বিশ্বাস করি না। একই রকমভাবে সমালোচনাকেও উপেক্ষা করতে জানতে হবে।
প্রশ্ন : পত্রিকা খুলে কখনো কি মনে হয়েছে এই প্রথম আপনি নিজের সম্পর্কে খুব ভয়ংকর কিছু পড়ছেন?
শাহরুখ : একজন সাংবাদিক ছিলেন, তিনি লিখেছিল, ‘রাজু বান গেয়া জেন্টেলম্যান’ চলচ্চিত্রে আমার অভিনয় হতাশাজনক ছিল। কিন্তু রাজু বান গেয়া জেন্টেলম্যান চলচ্চিত্রটির আগে ও পরে আমি বহু বাজে ছবি করেছি এবং এটা চলতেই থাকবে। লোকেরা আপনাকে নিয়ে কী ভাবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজেকে আপনি কী ভাবেন। নিজেকে নিয়ে কী ভাবেন বলতে আমি এটা বোঝাচ্ছি না, ‘ও আমি বিরাট কিছু হয়ে গেছি!’ তবে যদি আপনি আপনার সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে জানেন, তাহলে বিরাট কিছু হওয়া কোনো ব্যাপার না। আমি আমার বইতে এটা লিখেছি। আমরা আমাদের দুর্বলতাগুলোকে ঢেকে রাখি। আমি বলি দুর্বলতাগুলোকে কবর থেকে বের করো। এগুলো ভেঙেচুরে দেখো। পরে আবার সেগুলো ঢেকে রাখো। যদি আপনি আপনার দুর্বলতার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানেন তখন কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। ধরুন, আমি একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে গেছি। আমি আবার সেটা জেতার চেষ্টা করব। এই কারণে নয় যে আমি হেরে গেছি বলে আপনি আমার সমালোচনা করছেন। এই কারণেও নয় যে আমি আবারও জেতার চেষ্টা করছি দেখে আপনি আমার প্রশংসা করবেন। বরং এই কারণে আবারও দৌড়াব, কারণ আমার দৌড়াতে ইচ্ছা করছে। আমার কারো কথাতেই কিছু যায়-আসে না, কারণ আমি নিজেকে সব সময় বলি, আমি কাউকে দেখানোর জন্য কিছু করছি না। আমি মনে করি না, যে উসাইন বোল্ট ১০০টি স্বর্ণপদক জয় করেছে, এ কারণে যে তার প্রতিবেশী বলেছে, উসাইন বোল্ট দ্রুত দৌড়াতে পারেনা। হতে পারে সে যখন তরুণ ছিল কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় হয় তো সে হেরেছে, তবে সে সবসময় জিততেই চেয়েছে এবং এখনো সে তার জেতার ইচ্ছাটা বজায় রেখেছে।
প্রশ্ন : জীবনের এই দৌড়ে গৌরিও (গৌরি সেন) আপনার পাশে ছিলেন। বিবাহের রাত্রিটি আপনার একটি ছবির সেটে কাটিয়েছিলেন। গৌরি কি সত্যিই সে সময় আপনার পাশে ছিলেন?
শাহরুখ : মুম্বাইয়ে চলে আসা আমাদের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন ছিল। শুধু গৌরির জন্য নয়, আমার জন্যও। আমরা আমাদের শহর ছেড়ে এসেছি, আমরা যে পরিবেশে বড় হয়েছি, হঠাৎ করেই তার চেয়ে ভিন্ন একটা পরিবেশে এসে পড়েছিলাম। আমি মনে করি, আমি এবং গৌরি দুজনকেই নতুন এই পরিবেশকে মোকাবিলা করতে হয়েছে।
এমনও দিন গেছে যে আমি তাকে এমন জিনিসের ব্যাখ্যা করছি, যা আমি নিজেই ঠিকমতো বুঝিনি। এমনও দিন গেছে যখন সে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বলেছে, ঠিক আছে, এইটা এভাবে করলে, বিষয়টা এ রকম দাঁড়াবে। চল বিষয়টাকে নিয়ে আরো ভালো কিছু করি। তবে প্রথম দুই-তিন বছর আমাদের মনে হয়েছে আমরা একটি দুনিয়ায় আছি, যেখানে আমরা মানানসই না। আমরা আমাদের পরবর্তী জীবন কীভাবে কাটাব তা বুঝতেই আমাদের বিয়ের প্রথম দুই-তিন বছর চলে গেছে। কারণ নিজেদের ভেতরে কোনো এক কোণে আমরা সবাই ভালো এবং সুখী থাকতে চাই। সত্যি বলতে যত দূর মনে পড়ে, আমি কখনো ভাবিনি যে আমি বড় কোনো তারকা হব, কারণ আমরা জানতাম না তারকাখ্যাতির বিশালতা কতটুকু বা কীভাবে তা অর্জন করতে হয়।
প্রশ্ন : আপনাদের জীবনটা যেভাবে বদলে গেল তাতে কি আপনি এবং গৌরি সুখী?
শাহরুখ : এই তো সম্প্রতি আমরা (গৌরি খান এবং শাহরুখ খান) একসঙ্গে বসে কথা বলছিলাম। সন্তানেরা আমাদের পাশেই ছিল। এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। আমরা দুজনেই সত্যি সত্যি বিশ্বাস করি আমরা ২৫-২৬ বছরে বড় কোনো স্বপ্নের মধ্যে বসবাস করছি। একটা সুন্দর স্বপ্ন। যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা সুখী। তা ছাড়া আমার সন্তানেরা এমন একটি স্থানে বড় হয়েছে যেখান থেকে তারা মেনে নিয়েছে যে আমি শুধু তাদের নই। আমি গোটা বিশ্বের। আমি মনে করি, আমার স্ত্রী এবং আমার বোনও সেটাই বিশ্বাস করে। কিন্তু সেখানেও গোপনীয় কিছু অংশ থাকে। যা গোটা বিশ্ব জানে না। আমার পরিবার গোপনীয় অংশটাকে উপভোগ করে। তারা আমার গোপনীয়তাকে হৃদয় দিয়ে বোঝে। তারা অনুভব করে। এটা আমি ঠিক মনে করি। কারণ জীবনের গোপনীয় একান্তই ব্যক্তিগত এবং সত্যি বলতে তারা আমার জীবনের অন্যান্য অংশ নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমার পরিবার বলে, ও তুমি এটা করে খুশি আছো, ঠিক আছে চালিয়ে যাও। আমার পরিবার সব সময় আমার ভালোটা নিয়ে চিন্তা করে। তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয় যখন আমি শুটিংয়ের জন্য ৪০ দিন বাইরে থাকি। বাসা এবং আব্রামকে মিস করছি। তাই আব্রামকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা আমার জনপ্রিয়তাকেও সামলায়, আবার গোপনীয় অংশটাকেও সামলে রাখে। তারা এটা অন্য কারো সঙ্গে শেয়ার করে না।
প্রশ্ন : যখন আপনারা দুজনেই মুম্বাই এলেন, তখন গৌরি কি আপনার ওপর কোনো শর্ত চাপিয়ে দিয়েছিলেন?
শাহরুখ : না। সেখানে কোনো শর্ত ছিল না। আমি তাকে বলেছিলাম একটি একটি করে বছর পার করে দেবো। আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করব, জানি না তার পরিণতি কী হবে।
আমরা এটাও জানতাম না যে হিট ছবি কাকে বলে আর ফ্লপ ছবি কাকে বলে। তারপর আমি কাজ করা শুরু করি এবং ভালো বাড়ির খোঁজ করতে থাকি। তারপর দুজনের মিলে একটা ভালো বাড়ি কিনে ফেলি। একটা জিনিস আমাদের চালিয়ে অন্য একটা জিনিসে নিয়ে গেছে। আমরা এখনো থামিনি। মনে হয়েছে আমরা উঁচু কোনো পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছি। কখনো আমাদের খুব ভালো সময় গিয়েছে, কখনো মোটামুটি, আবার কখনো ভয় পেয়েছি, জীবনের পথ উঁচু-নিচু ও অদ্ভুত মনে হয়েছে। আমাদের জীবনটা এমনই গিয়েছে। আপনি যদি জীবন থেকে একবার বের হয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনি আবার জীবনে প্রবেশ করতে চাইবেন না। কিন্তু শেষমেশ আবারও আপনাকে প্রবেশ করতে হবে (হাসি)। জীবনটা আসলে আকাশ থেকে প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার মতো। সব মিলিয়ে জীবনের স্বপ্নটা ভালোই দেখেছি।
প্রশ্ন : আপনার চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কেমন? আপনার প্রিয় চলচ্চিত্র ‘কাভি হা, কাভি না’, তাদের কোনটা পছন্দ?
শাহরুখ : আমার পরিবার আমাকে ভালো করেই জানে। তাই তারা এটাও জানে যে পর্দায় আমি যে দৃশ্যগুলো করি বাস্তবে আমি সে রকম না। তাই আমার পরিবারের এ ব্যাপারে কোনো আসক্তি নেই। তারা কখনো আমার ছবি দেখে ‘দারুণ হয়েছে’ বলে ওঠে না। তবে তার মানে এই না যে তারা আমার প্রশংসা করে না। অবশ্যই তারা আমার প্রশংসা করে। যদি আমি ভালো ছবিতে অভিনয় করি বা আমাকে কোনো ছবিতে তাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে তারা সেটার প্রশংসা করে। তবে বেশিরভাগ সময় প্রশংসার পরিবর্তে তারা বলে, তোমাকে অমুক ছবিটাতে ভালো লেগেছে। এর মানে কিন্তু শারীরিকভাবে ভালো লাগা নয়। আমি কখনো বড় কোনো প্রশংসা পাইনি। আশাও করিনি কোনোদিন। যদি তারা এমন কিছু বলে আমি জানি, তারা ইচ্ছে করে বলেনি। (হাসি)
প্রশ্ন : যদি আপনাকে নিজের জীবন থেকে সেরা স্মৃতি বা মুহূর্তগুলোর তালিকা করতে বলা হয়। তাহলে সে তালিকায় আপনার কোন স্মৃতিগুলো রাখবেন?
শাহরুখ : প্রত্যেকটা মুহূর্তই আলাদা। তবে একসঙ্গেও বলা যায়। আমার তিনজন সন্তানের জন্মের মুহূর্তগুলো। প্রত্যেকটারই আলাদা গল্প রয়েছে। এই মুহূর্তগুলো জীবনের বিভিন্ন ধাপে আমার সামনে এসেছে। তাই সেগুলো আমার কাছে ভীষণ আলাদা। যেমন আরিয়ানের আগে বেশ কয়েকটা গর্ভপাতের ঘটনার পর আরিয়ানের জন্ম হয়েছে।
সেদিনগুলো কঠিন ছিল। তারপর আমার মেয়ে সুহানার জন্ম হলো। আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। গৌরি ও আমি চাইতাম, আমাদের প্রথম সন্তান যেন মেয়ে হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বারে হলো। আমার সন্তানরা আমার মতো দেখতে হলো কি না এটা নিয়ে গৌরি খুব উদগ্রীব ছিল। সুহানার প্রসবের পর গৌরি আমাকে প্রথম যে প্রশ্নটি করেছিল, ‘মেয়ে কি তোমার মতো দেখতে হয়েছে’? যেহেতু সুহানার গালে টোল রয়েছে, তাই বলা যায় অবশ্যই সে দেখতে আমার মতো হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাটা আসলেই মজার ছিল।
তারপর অনেক পরে আমরা আমাদের জীবনে তৃতীয় সন্তানের অভাব বোধ করি। তারপর আব্রামের জন্ম। তারা আমার জীবনের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় রয়েছে। যেমন আমার পেশাগত জীবনে দুটি চলচ্চিত্রের কথা সবচেয়ে ওপরে এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ এবং ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’। কারণ এই দুটি ছবির সেটেই করণ (করণ জোহর) এবং আদির (আদিত্য রয় চোপড়া) সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। আমার মনে আছে, যেদিন আমরা প্রথম ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ দেখি, সেদিন গৌরির জন্মদিন ছিল। মান্নাতে বিশাল এক পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। তখনও আমরা মান্নাতের নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়নি। বাড়িতে কোনো বিদ্যুৎ ছিল না।
করণ এবং আদি মোমবাতি জ্বালাল। সেই সময়টা দারুণ ছিল। তাই সে সমস্ত ক্ষুদ্র টুকরো বা অংশগুলোই আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত। এ ছাড়া আমি মনে করি, মাদাম তুসোর জাদুঘরে আমার মোমের মূর্তির মুহূর্তটাও অসাধারণ ছিল। এ ছাড়া বাড়িতে আমার ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্ত রয়েছে। মাঝেমধ্যে আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিই। এ সময়টাও খুব ভালো কাটে। যখন আপনি তাদের বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানবেন বা তাদের আনন্দের মুহূর্তগুলোর সম্পর্কে জানবেন, আমি মনে করি এটা প্রতিদিনের আনন্দের একটি মুহূর্ত যখন পরিবারের সবাই একত্রিত হই।
প্রশ্ন : আপনার বেড়ে ওঠাটা হয়তো সংগ্রাম করে কেটেছে, কিন্তু আপনার সন্তানদের তো কোনো কিছুরই অভাব নেই।
শাহরুখ : না, একদমই না। আমার সন্তানরাও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। আমি জানি, আমার পরিচিত মানুষদের মধ্যে কেউই আমার সন্তানদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়নি। তাদের কাটানো উচিত নয়। কারণ এটা তাদের দুনিয়া নয়। কিন্তু আমার বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা আর আমার বেড়ে ওঠার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। বেড়ে ওঠা মানে এটা বোঝায় না যে কী রকম বাড়িতে আপনি বসবাস করছেন। আমার বেড়ে ওঠাটাও দারুণ ছিল। পাশাপাশি আমার সন্তানদের বেড়ে ওঠাটাও দারুণ, শুধু তারা তাজমহলের মতো বড় একটা বাড়িতে বসবাস করে। আমাদের (শাহরুখ ও তার বোন) বেড়ে ওঠাটা হয়তো বিশাল দারিদ্র্যের মধ্যে হয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্য কখনো আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেনি। বাড়িটা আসলে কোনো অর্থ বহন করে না। বেড়ে ওঠা মানে কতটা আবেগ দিয়ে আপনার পিতা-মাতা আপনাকে বড় করে তুলল, আপনার সঙ্গে আপনার সন্তানদের সম্পর্ক কেমন সেটা। আর্থিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে বেড়ে ওঠার সে রকম সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন : আপনার আত্মজীবনীর নাম টোয়েন্টি ইয়ার্স অ্যা ডেকেড (২০ বছরের এক দশক) এখন কি আপনি সেটার নাম পরিবর্তন করে ২৫ বছর পার হয়ে গেছে রাখবেন?
শাহরুখ : ‘যাব হ্যারি মেট সেজাল’ (শাহরুখের আসন্ন চলচ্চিত্রের নাম) নামটা যেমন শুটিং শেষে ঠিক হয়েছে। ঠিক তেমনি জীবনের শেষে আত্মজীবনীর নাম পরিবর্তন হবে (হাসি)। আগে আমাকে জীবনটা পার করতে দিন। আত্মজীবনীতে আমার বলিউড জীবনের ১০ বছরের কথা লেখা আছে। এখন তো বলিউডে ২৫ বছর হয়ে গেল। তাই আত্মজীবনীতে আরো ১৫ বছরের কথা লেখা বাকি। এখনো অনেক ভালো কিছু ঘটছে আমার সঙ্গে। আমি আমার বইতে সেগুলো যোগ করে যাচ্ছি। তার আমার মনে হয়, এই বই কখনো শেষ হবে না এবং আমি আমার বইয়ে ভালো কিছু লিখেই যেতে থাকব। তবে এমন একদিন আসবে যখন একজন বলবে জীবন শেষ। আর আমি লেখা থামিয়ে দেবো।