মেয়ের অভিভাবকত্ব পেলেন অভিনেত্রী বাঁধন
জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের বিচ্ছেদ হয় বিয়ের পাঁচ মাস পরই। মাশরুর হোসেন সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তানের নাম সায়রা। সায়রাকে নিজের কাছে রাখার অধিকার চেয়ে গত বছরের ৩ আগস্ট পারিবারিক আদালতে মামলা করেছিলেন বাঁধন।
আজ সোমবার ১১টায় দ্বাদশ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত এ মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে জানানো হয় কন্যা শিশুর অভিভাবক হচ্ছেন মা। মায়ের জিম্মাতেই থাকবে কন্যা সায়রা। বাবা মাসে কেবল দুই দিন মায়ের বাসায় গিয়ে মায়ের উপস্থিতিতে মেয়েকে দেখে আসতে পারবেন। কিন্তু কন্যার সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
রায় ঘোষণার পর নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে বাঁধন তাঁর আইনজীবী দিলরুবা শরমিন সহ একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওতে তিনি বেশি কথা না বললেও, তাঁর পক্ষে আইনজীবীই কথা বলেন। তবে ফেসবুকের পোস্টে বাঁধন নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন। নিচে ফেসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘আজ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখ, দ্বাদশ সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত, (ঢাকা) যে আদেশ আমার মামলায় দিলেন, তা একটি যুগান্তকারী রায় এবং আদালত পাড়ায় মাইলফলক। আইনজীবীরা বললেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশ এটি বিরল উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই আদেশ পাবার জন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ ।
মাননীয় আদালত আজকে আদেশ দিয়েছেন - কন্যা শিশুর অভিভাবক হচ্ছেন মা। মায়ের জিম্মায়ই মেয়ে থাকবে। বাবা মাসে কেবল দুই দিন মায়ের বাড়িতে গিয়ে মায়ের উপস্থিতিতে মেয়েকে দেখে আসবেন, কিন্তু কন্যার সর্বোত্তম মঙ্গলের জন্য মায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত । অর্থাৎ, মাননীয় আদালত সাধারণ 'কাস্টডি' নয়, বরং সম্পূর্ণ 'গার্ডিয়ানশিপ' আমাকে দিয়েছেন ।
বাবা তার কন্যা শিশুর পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন । বিজ্ঞ আদালত সেটা ফেরত দিতে নির্দেশ দিলেন । যদি বাবা না দেন, তবে বাদীকে থানায় জি.ডি করতে বলেছেন এবং নতুন পাসপোর্ট দেবার জন্য পাসপোর্ট অফিসে বিজ্ঞ আদালত চিঠি ও আদেশ পাঠিয়ে দেবেন বলেও জানালেন। কন্যা শিশুকে নিয়ে মা দেশের ভেতরে এবং বাইরে যেতে পারবেন যেহেতু মা'ই কন্যা শিশুর অভিভাভবক।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা বিজ্ঞ আইনজীবী দিলরুবা শরমিন-কে, যিনি মামলাটি কেবল আইন দিয়ে নয়, মানবিক দিক বিবেচনা করে পরিচালনা এবং আইন ও মানবিক - দু'দিক থেকেই উপস্থাপন করেছেন।
একটি বিশেষ দিক না উল্লেখ করলেই নয় : সামান্য যে ৫ লক্ষ টাকার দেন মোহর - সে'টির কোন দাবী আমি করিনি, কন্যার ভরণ-পোষণ বাবা এতদিন করেননি, কোন খোরপোষ দেননি, আমি চাইওনি এবং সেটা প্রকাশ্য আদালতেই আজকে বলেছি । বাবা'র কাছে ভরণপোষণ - এ'টা প্রতিটা মেয়ের অধিকার, মেয়ের দেখভাল করা প্রতিটি বাবারই দ্বায়িত্ব । সেই কাজটা এতদিন আমিই করে এসেছি - তিনি করবেন কিনা, সেটা তারই বিবেচনায় থাক।
আমার জীবনের এই অংশটায় যারা যারা সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে আমার গভীর কৃতজ্ঞতা । আপনাদের নাম নিতে চাই না, শুধু অনুরোধ করবো - মেয়েকে যেন এইভাবেই, আমার নিজের সামর্থে, মানুষ হিসেবে বড় করতে পারি, সেই দোয়া করবেন।
সততাই যে সর্বোত্তম পন্থা সেটা আবারও প্রমাণ হলো। নিশ্চিত ছিলাম, সঠিক ভাবে আইনকে উপস্থাপন করতে পারলে আইনের সুশাসন যে দেশে এখনও আছে, সেটা প্রমাণ পাওয়া যায়।’