‘টাকা কামাতে গিয়ে পাপ তো আর করতে পারব না’
রমজান মাসে বেশিরভাগ মানুষ ব্যস্ত থাকে নামাজ-রোজা আর ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে। সারাদিনের কাজ, ধর্মপালন আর অন্য আনুষ্ঠনিকতা শেষে সিনেমা দেখার সময় হয় না কারো। আবার অনেকে হয়তো রোজার মাসে সিনেমা দেখাটাকে সমর্থনও করেন না।
তাহলে এই রমজান মাসে সিনেমা হলগুলো কি বন্ধ থাকে? বন্ধ থাকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী? যদি তাই হয়, যে পেশার মানুষেরা বেঁচে থাকেন সিনেমা হলকেন্দ্রিক ব্যবসা বা কাজের ওপর তাঁদের উপায় কী হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা পাওয়া গেল রাজধানীর পল্টনের ঐতিহ্যবাহী জোনাকি সিনেমা হল থেকে।
হলের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মদ হামিদ জানালেন, চলতি রোজার মাসে তাঁরা ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ সিনেমাটি প্রদর্শন করছিলেন। কিন্তু প্রথম রোজার দিন মাত্র চারজন দর্শক ছিলেন। দ্বিতীয় রমজানে ছিলেন ছয়জন। এমন অবস্থায় লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে হলটির মালিক রমজান মাসে হলটি বন্ধ রাখতে বলেন। আর নিয়ম অনুযায়ী, হল বন্ধ রাখলে বেতন দিতে হয় না মালিককে। ফলে বিপদে পড়ে যান কর্মীরা।
হামিদ বলেন, ‘আমরা মোট ১৮-১৯ জন স্টাফ এখানে কাজ করি। এর মধ্যে আটজনের বাড়ি ঢাকার আশপাশে। ফলে এদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আর যাদের গ্রামে বাড়ি আছে তাঁরা এরই মধ্যে গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছেন।’
যারা ঢাকায় আছে সেই কর্মীরা মিলে ইফতার বিক্রির কাজ শুরু করেছেন বলে জানান হামিদ। দিন শেষে যা বিক্রি হয় তাই লাভ বলে জানান তিনি।
যেহেতু হল মালিক লোকসান দিয়ে হল চালাবেন না। তাই এই মাসে হলের কর্মচারীদের পকেটও থাকে শূন্য। ঈদুল ফিতরের দিন থেকে মূলত শুরু হয় চলচ্চিত্র ব্যবসা। কিন্তু তার আগের মাসটি যায় চরম কষ্টে। আর সেই কষ্ট থেকে রেহাই পেতেই ইফতার বিক্রি শুরু করে কিছু উপার্জনের চেষ্টা করছেন জোনাকি সিনেমা হলের কর্মীরা।
ঈদের দিন দুপুর থেকে টাকা আসতে শুরু করে উল্লেখ করে হামিদ বলেন, ‘কিন্তু ঈদের জামা, খাবার সেমাই কিনব কীভাবে? তাই আসলে আমরা সিনেমা হলে ইফতারের ব্যবসা করছি দুই বছর ধরে। সারা মাস কষ্ট করে ইফতার বেচি, তা দিয়ে সবার জামা কাপড় কিনি। আমাদের আসলে রোজার ঈদটা কষ্টের, কোরবানির ঈদে সুখ।’
ইফতার বিক্রি করে কেমন অর্থ উপার্জন হয় জানতে চাইলে হামিদ বলেন, ‘গত বছরে সিনেমা হলে পাশাপাশি আমরা ইফতার বিক্রি করেছি। তখন আমরা ৪৬ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম, কিন্তু এই বছরে বিক্রি একটু কম মনে হচ্ছে। আমরা মোট আটজন এখানে কাজ করছি। জানি না ঈদের আগে কতটাকা করে ভাগ করে নিতে পারব।’
বিপদে পড়ে ইফতার বিক্রির কাজ শুরু করলেও খাবারের মান নিয়ে বেশ সচেতন জোনাকি সিনেমা হলের কর্মীরা। বাসা থেকে ইফতার তৈরি করে নিয়ে আসেন কাউন্টার ম্যানেজার হামিদের স্ত্রী শেফালি আকতার কাজল। নিজের হাতেই সব তৈরি করেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানালেন তিনি।
শেফালি আকতার বলেন, ‘আমরা তো আর খাবারের ব্যবসা করি না, শুধু রোজায় ইফতার বিক্রি করি। কারণ আমাদের ছেলে মেয়ে আছে, তাদেরও বাচ্চা আছে। আমাদের নাতিদের জন্য হলেও ঈদে কিছু কিনতে হয়। আমি তো সবসময় ঈদের দিন দুপুরে শাড়ি কিনতে যাই। কিন্তু নাতিরা তো ছোট, তারা তো আর বোঝে না টাকা আছে কি নাই। আমি নিজের হাতে ইফতার বানিয়ে নিয়ে আসি। ঘরে পরিষ্কার করে সব কাজ করি, কারণ টাকা কামাতে গিয়ে পাপ তো আর করতে পারব না।’